শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সক্রিয় হতে চায় ঐক্যফ্রন্টের শরিকরা ধীরে চল নীতিতে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলো ফের মাঠে সক্রিয় হতে চায়। সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে চায় তারা। তবে ‘ধীরে চল’ নীতিতে এগোচ্ছে বিএনপি। দলটি নিজেদের নিয়েই আপাতত ব্যস্ত থাকতে চায়। দল গুছিয়ে নতুন বছর আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যফ্রন্টকে পাশে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। এ জন্য এককভাবে কর্মসূচি নিয়েই মাঠে থাকছে বিএনপি। ঐক্যফ্রন্টের শরিকদেরও যার যার মতো করে দল গোছাতে পরামর্শ দিচ্ছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুরোপুরি নিস্ক্রিয় ঐক্যফ্রন্ট। এরমধ্যে দু-একটি বৈঠক হলেও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও অনুপস্থিত ছিলেন। সর্বশেষ বুধবার কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে দেখা যায় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের।

জানা গেছে, কূটনীতিকদের উদ্যোগেই মূলত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করতে কূটনীতিকরাও ভূমিকা পালন করছেন। কূটনীতিকদের কেউ কেউ ফ্রন্টের নেতাদের উদ্দেশে বলছেন, বাংলাদেশে এখন শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্য ঐক্যফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। কিন্তু বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নিজেদের মতো করে বেরিয়ে যান। ফ্রন্টকে সক্রিয় করা বা শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখন দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত। এখন চাই, শরিকরাও নিজেদের দল গুছিয়ে প্রস্তুত হোক। আমরা ডিসেম্বরে একটি কাউন্সিল করারও চিন্তাভাবনা করছি। তবে নতুন বছর থেকে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি হতে পারে।’

জানা যায়, বিএনপির বড় একটি অংশই এখন চান একক কর্মসূচি নিয়ে এগোতে। ২০-দলীয় জোট বা ঐক্যফ্রন্ট কোনোটির সঙ্গে না থেকে দলীয়ভাবে মাঠে নামারও পক্ষে তারা। ঈদের আগে কয়েকটি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ এবং সর্বশেষ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের একটি অংশ বলছেন, বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করলেও একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে সংসদে থাকত। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে থাকতে হতো না। সর্বশেষ তৃণমূলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরের সময় মাঠ পর্যায়ের নেতারাও দলকে এককভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। দলের মধ্যসারির নেতারা জানান, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে হলে রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচিতে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিএনপির যত গরজ তাতে অন্য কারও থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। ঐক্যফ্রন্টের কোনো কোনো শরিক দল খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কথা বলতেও নারাজ। তাই বিএনপিকেই আইনিভাবে লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথে এককভাবে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় হওয়া জরুরি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা চাই মাঠে সক্রিয় হতে। কিন্তু এককভাবে চাইলেই হবে না, বিএনপিকেও এগিয়ে আসতে হবে।’ গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্টের তৎপরতা বাড়াতে চাই। আশা করছি, অক্টোবর থেকে ঐক্যফ্রন্ট মাঠে সক্রিয় হবে। নতুন কর্মসূচি দেবে। তবে বিএনপি এগিয়ে এলেই ঐক্যফ্রন্ট মাঠে সক্রিয় হবে। ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্র জানায়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি শোডাউন করতে চায় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কেউ কেউ। তবে শিগগিরই একটি বৈঠক ডাকার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বিএনপি রাজি হলে ঐক্যফ্রন্টের পরিধিও বাড়ানো হবে। ফ্রন্টে জামায়াত বাদে ২০-দলীয় জোটের সব রাজনৈতিক দলসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকেও যুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। এ প্রসঙ্গে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমাদের সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমরা চাই সরকারবিরোধী একটি বৃহৎ প্লাটফরম। সরকারের অন্যায়-অত্যাচারসহ নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করতে হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো বৈঠক হয়নি। কী এজেন্ডা নিয়ে বসবে, কী করবে তা নিয়েও অনানুষ্ঠানিক কোনো কথাবার্তাও হচ্ছে না। মূলত বিএনপির কারণেই এটা হচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর