শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অস্থির ডলার বাজার

আলী রিয়াজ

ডলার বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে নগদ ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনে ঘাটতি মোকাবিলা করছে। টাকার বিপরীতে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকায়। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার কেনাবেচার সর্বনিম্ন দর ছিল ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এই দর ছিল ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা। গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন সময় বাজারে নগদ ডলারের ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে। কয়েক বছর আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর নিয়ন্ত্রণের জন্য বাজার থেকে কিনে রিজার্ভ করেছে। এখন হয়েছে উল্টো পরিস্থিতি। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাজারে ডলার সরবরাহ করতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কয়েক বছর ধরেই আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। ফলে আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে ডলারের বাজারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ভিন্ন কথা। এ ছাড়া হুন্ডি কমাতে না পারায় দেশ থেকে অবৈধ উপায়ে ডলার পাচার ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে বাজারে ডলারের সংকট কাটছে না। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ডলার কেনাবেচার দর বেসিক ব্যাংকে ছিল সর্বোচ্চ। ব্যাংকটিতে ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৭ টাকা। এ ছাড়া প্রাইম ব্যাংকে ৮৫ টাকা, এবি ব্যাংক ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা, ইসলামী ব্যাংক ৮৩ টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা, উত্তরা ব্যাংক ৮৬ টাকা, আইএফআইসি ৮৬ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা, এনসিসি ব্যাংক ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা, এসআইবিএল ৮৬ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে। এরকম দর দেখা গেছে অধিকাংশ ব্যাংকগুলোতে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৪০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। একই সময়ে বাজার থেকে কোনো ডলার কেনার প্রয়োজন হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের। গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার সরবরাহ করেছে খোলাবাজারে। তবে ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দর নির্ধারণ করে না দিলেও অস্বাবিক বৃদ্ধি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের দুই মাসে নিয়ন্ত্রণ কোনো কাজে আসেনি। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে গিয়ে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনতে বাধ্য হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেখানে ৮৪ টাকায় ডলার বিক্রি করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সেই দর ৮৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আমদানিকারকরা বলছেন, ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অন্যদিকে আমদানিকারকদের পাশাপাশি সাধারণ বিদেশগামী রোগীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্যের দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ডলারের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর সঠিক কারণ খুঁজতে হবে। কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ শোনা যায় ডলারের বাজার অস্থিরতার জন্য। তবে সবার আগে পাচার ঠেকাতে হবে। শুধু ব্যাংক নয় অসাধু ব্যবসায়ীরা এর জন্য দায়ী। তাদের খুঁজে বের করা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি অন্য ব্যাংকারদের সচেতন হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর