শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মৎস্য চাষে বিপ্লব দক্ষিণাঞ্চলে

দুই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪৪৬১ কোটি টাকা হেক্টরপ্রতি দ্বিগুণ উৎপাদনের লক্ষ্য

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

মৎস্য চাষে বিপ্লব দক্ষিণাঞ্চলে

২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে চিংড়ি ও সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২৯ হাজার ৬ দশমিক ৮২১ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ২২৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গলদা, বাগদা ও অন্যান্য চিংড়ি মাছ রপ্তানি হয়েছে ২৪ হাজার ৪১৩ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ২১৭১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। হিমায়িত কার্প জাতীয় মিঠা পানির মাছ ও বরফায়িত পারশে, ক্যাট ফিশ, শুঁটকি ও অন্যান্য সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে আরও প্রায় ১১৮ কোটি টাকার। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চিংড়ি ও সাদা মাছ রপ্তানি হয়েছে ২৯ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ২৪৮৮ কোটি টাকা। এতে মৎস্য চাষে বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। খুলনা মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত এ অঞ্চল থেকে বছরে গড়ে ২৫২৪ কোটি টাকার মাছ বিদেশে রপ্তানি হতো। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে গলদা চিংড়ির দরপতন ও বিদেশে ইলিশ সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় রপ্তানির হার কিছুটা কমেছে। তবে মিঠা পানির সাদা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রজাতির মাছের রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলে হেক্টরপ্রতি মাছের দ্বিগুণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পদক্ষেপ নিয়েছে মৎস্য অধিদফতর। এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ, মিঠা পানির আধার ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাল খনন ও পোনা সরবরাহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদিত মাছের পরীক্ষামূলক প্রসেসিং প্লান্ট, চেইন মার্কেট ও রেডি ফিশ বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুলনা জেলা মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. সাজদার রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি ও সাদা মাছের উৎপাদন আগের তুলনায় বেড়েছে। গত অর্থবছরে খুলনা জেলায় প্রায় ৬৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন সাদা মাছ উৎপাদিত হয়। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন বেশি। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জানা যায়, বর্তমানে খুলনায় উন্মুুক্ত খাল ও সংযুক্ত বিলগুলোতে হেক্টরপ্রতি মাছের উৎপাদন ৭০০ কেজি। মাছ চাষে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রায় ২৫ হেক্টর ভরাট হওয়া খাল খনন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দলভিত্তিক মাছ চাষে হেক্টরপ্রতি ১৫০০ কেজি মাছ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে মাছ চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সরকার কাজ করছে। চিংড়ির উৎপাদন বাড়াতে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষ ও মিঠা পানিতে গলদা চাষ শুরু হয়েছে। মিঠা পানির মাছ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাবদা, সরপুঁটি, ফলই, মাগুর, কৈসহ আরও কিছু বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছ ফিরে এসেছে। মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ খুলনার উপ-পরিচালক প্রীতিষ কুমার মল্লিক বলেন, সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে পাল্টে যেতে পারে অর্থনৈতিক অবস্থা। মাছের উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এদিকে খুলনায় নিরাপদ মাছ চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণবিষয়ক প্রকল্প হাতে নিয়েছে ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ ও প্রান্তি একোয়াকালচার লিমিটেড। এ-বিষয়ক সেমিনারে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, স্থানীয় প্রজাতির মাছের সংকট থাকলেও চাষকৃত মাছের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক। এ পরিস্থিতিতে মাছের নিরাপদ চাষ ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তা রান্নার উপযোগী করে বাজারজাত করা গেলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানও সম্ভব হবে।

সর্বশেষ খবর