শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নির্যাতিত গৃহবধূ বললেন এসআই খায়রুলের কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরের শার্শায় পুলিশ অফিসার ও তার সোর্সের হাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বলেছেন, এসআই খাইরুলও তাকে ধর্ষণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘(এসআই) খাইরুলরে আমি শুধু চিনিই নে, খুব চিনি। তিনিও ধর্ষণে ছিলেন। আমার স্বামীরে বারে বারে বিনা অপরাধে তুলে  নিয়ে যান। এখন প্রশাসনরে নাড়লি আমি একেনে টিকে থাকতি পারব না, গরিব মানুষ। এই হিসেব করে নিজে বিবেচনা করে দেকচি যে খাইরুলরে আমার নাড়ার দরকার নেই, উনি পুলিশ, উনার সাথে তো আমি পারব না। তারই জন্যি আমি উনার কতা অস্বীকার করিচি’। নির্যাতিতা সেই নারী শুক্রবার লক্ষণপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘আসলে আমি শুধুই চিনিনে, খুব চিনি খাইরুলরে। আমাদের থেকে ৮ হাজার, ৪ হাজার, ৫ হাজার টাকা নিতিই থাকে। তারপরেও আমার স্বামীরে বিনা কারণে ধরে নিয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট (ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট) তো আসবে, সেখানেই বোঝা যাবে সব (কে কে ধর্ষণ করেছে)’। তিনি বলেন, ‘আর মামলার অন্য আসামিরা তো আটক হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নিলেই জানা যাবে, খাইরুল ছিল কি না। তারাই তো আমার চেয়ে বেশি ভালো জানে’। তাহলে চার তারিখে কেন বললেন যে খাইরুল ধর্ষণের সময় ছিল না?- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নারী বলেন, ‘খাইরুলরে আমার সামনে নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় যে ইনি কি আপনার কাছে গিয়েছিল? তখন খাইরুল আমার দিকে এমনভাবে চোখ বড় বড় করে তাকাইছে, এমন ভাষায় তাকাইছে, আমি বুজতে পারি যে আমারে মানা করছে। আমি চিন্তা করলাম এর সাথে আমি পারব না। তাই বলি যে ঘটনার সময় খাইরুল ছিল না। আমি চাই খাইরুলসহ এই মামলার অন্য আসামিরা এমন শাস্তি পাক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপকর্ম করতে সাহস না করে’। গত চার সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই নারী নিজে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ধর্ষণের পরীক্ষা করাতে এলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সেদিন তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ও তার সোর্স কামরুল ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে তাকে তার নিজ বাড়িতে ধর্ষণ করেন। এ সময় সেখানে গ্রামের আরও দুজন ব্যক্তি ছিলেন।

 এ ঘটনার পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসআই খাইরুলসহ বাকি তিনজনকে ওই নারীর সামনে হাজির করলে তিনি বাকি তিনজনকে শনাক্ত করতে পারলেও এসআই খাইরুলকে শনাক্ত করতে পারছেন না বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন। ওইদিন রাতেই এ ব্যাপারে শার্শা থানায় একটি মামলা হয়, যেখানে এসআই খাইরুলকে আসামি করা হয়নি। পুলিশ চার অভিযুক্তের মধ্যে বাকি তিনজনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে একটি প্রেসনোটও দেওয়া হয়। সেখানে ব্যাখ্যা দেওয়া হয় যে, ওই নারী খাইরুলকে শনাক্ত করতে না পারার কারণে মামলায় খাইরুলকে আসামি করা হয়নি। এদিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং দলটির নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুণ রায় চৌধুরী গতকাল দুপুরে শার্শায় নির্যাতিত ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা ও সাহস দেন। সাংবাদিকদের বলেন, এই নির্যাতিত নারী অনেক সাহস দেখিয়েছেন। তারপরও তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলার এজাহারে এসআই খাইরুলের নাম দেওয়া হয়নি। নিপুণ রায় বলেন, আমরা চাই অবিলম্বে এসআই খাইরুলকে এজাহারনামীয় আসামি করা হোক এবং বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

সর্বশেষ খবর