শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার পুঁজিবাজারের জন্য গ্রিন বন্ডের পরিকল্পনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

তারল্য সংকটে থাকা পুঁজিবাজারকে মূলধন সহায়তা দিতে গ্রিন বন্ড ছাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সরকার, যে বিষয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কারিগরি সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে। ম্যানিলাভিত্তিক দাতা সংস্থাটি এক্ষেত্রে দুটি প্রস্তাব দিয়ে বলছে, সরকার যদি এডিবির মাধ্যমে এই বন্ড ছাড়তে চায় তবে তারা ১০০ মিলিয়ন ডলারের গ্যারান্টি সহায়তা দেবে। অথবা সরকার চাইলে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাতের মাধ্যমেও এ ধরনের বন্ড ছাড়ার উদ্যোগ নিতে পারে।

এডিবির এই প্রস্তাবনা নিয়ে একটি সারসংক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে পাঠাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর আগে এডিবির প্রস্তাবিত গ্রিন বন্ড ইস্যুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতামত নেওয়া হয়েছে। গত ২৮ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সভা করে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকনির্ভর বাংলাদেশের আর্থিক খাতের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার সামর্থ্য কম। এ কারণে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিবর্তে করপোরেট বন্ড ছেড়ে দীর্ঘমেয়াদি অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হলে তা একদিকে যেমন পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সহায়ক হবে, তেমনি ব্যাংকিং খাতের তারল্য ব্যবস্থাপনাকে ঝুঁকিমুক্ত করতে সাহায্য করবে। জানা গেছে, এডিবি যে বন্ড ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে সেটি যে কোনো বড় প্রকল্পে অর্থায়ন, ব্যাংক বা পুঁজিবাজারের জন্য মূলধন সংগ্রহের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠান চাইলেও অর্থায়নের জন্য এটি ইস্যু করতে পারবে। তবে অর্থায়নের বিষয়টি যদি পরিবেশবান্ধব খাত বা সবুজ প্রকল্প না হয় সে ক্ষেত্রে নন গ্রিন বন্ড ইস্যুর সুযোগ থাকবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অরিজিৎ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুঁজিবাজারে মূলধন জোগানে এই বন্ড কীভাবে সহায়তা করবে সেটি এডিবির ফিজিবিলিটি স্টাডি করার পর  বোঝা যাবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানিয়েছে, বর্তমানে গ্রিন বন্ড ইস্যুর জন্য তাদের কোনো পৃথক নীতি নেই। তবে এ বিষয়ে কাজের সুযোগ থাকায় গ্রিন বন্ড ইস্যুর লক্ষ্যে এডিবির সহায়তায় একটি ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ইতিবাচক মতামত দিয়েছে।

সূত্র জানায়, এই বন্ড ছাড়ার ক্ষেত্রে এডিবি মূলত বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সংস্থাটির প্রতিনিধি ডংডং ঝ্যাং পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনের মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছে, বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক সম্পদের মোবিলাইজেশন খুব জরুরি। এক্ষেত্রে বৈদেশিক অর্থায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে বৈদেশিক অর্থায়নের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের ঋণ ও জিডিপির অনুপাতের ২৬ শতাংশ। দেশের কাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আরও বেশি বৈদেশিক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে গ্রিন বন্ড ইস্যু করা হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় হবে বলে জানিয়েছেন এডিবির প্রতিনিধি।

সর্বশেষ খবর