রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্ষমতা ভাগাভাগি জাতীয় পার্টিতে

জি এম কাদের চেয়ারম্যান, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ক্ষমতা ভাগাভাগি জাতীয় পার্টিতে

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর দুই মাসের মাথায় ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয় জাতীয় পার্টির। কে হবেন বিরোধীদলীয় নেতা, কে ধরবেন লাঙ্গলের হাল তা নিয়ে দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে দলটি। সংবাদ সম্মেলন করে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরাও। তবে সেই সংকটের আপাতত সমাধান হতে যাচ্ছে। দুই পক্ষই কিছুটা ছাড় দিয়ে মতৈক্যে পৌঁছতে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দেবর-ভাবির মধ্যে ক্ষমতারও ভাগাভাগি করা হচ্ছে। দুজন শিগগিরই একমঞ্চে উঠবেন বলে জানা গেছে। 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, পার্টির হাল ধরছেন এরশাদের ভাই জি এম কাদের। তাকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিচ্ছেন রওশন এরশাদ। তবে ছাড় দিতে হচ্ছে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার পদটি। ওই পদে থাকবেন এরশাদপতœী। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতার পদটি রওশন এরশাদ দেবর জি এম কাদেরকে ছেড়ে দিতে পারেন। তবে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বেগম রওশন এরশাদ পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকছেন। আর এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন তা সমঝোতার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে। চলমান সংকট সমাধানে জি এম কাদের এবং রওশন এরশাদের মধ্যে মধ্যস্থতার দায়িত্ব পালন করেছেন পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগুন নিভে গেছে। চলমান সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। আজকালের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সব সমস্যার ইতি টানা হবে।’

এদিকে গতকাল জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য এয়ার আহমদ সেলিমের যোগদান অনুষ্ঠানে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে বিভেদের অবকাশ নেই। বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। সঠিক পথে ও সুশৃঙ্খলভাবে জাতীয় পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এগিয়ে যাবে।’ পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি বলেন, ‘জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান। এ নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে আমরা একাদশ জাতীয় সংসদেও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে চাই। আশা করি, চলমান সংকটের সমাধান হতে যাচ্ছে। জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের যৌথ নেতৃত্বে দল আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।’

পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বেগম রওশন এরশাদ আমাদের মায়ের মতো, তিনি আমাদের অভিভাবক। আমরা বিশ্বাস করি, কিছু মানুষের পরামর্শে বেগম রওশন এরশাদকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’ গত বুধবার পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বনানীর কার্যালয়ে দলের অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এমপিদের নিয়ে যৌথসভা করেন জি এম কাদের। বৈঠকে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও ফখরুল ইমামকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের তা জানানোর কথা ছিল। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রংপুর-৩ আসনের চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে রংপুর মহানগর সেক্রেটারি এস এম ইয়াসিরের নাম ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু কাদের ও রওশনপন্থি উভয়েই ঐকমত্যের দিকে থাকায় ঘোষণা দেওয়া হয়নি। একই কারণে গতকাল বিকালে বেগম রওশন এরশাদের বাসায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে রওশনপন্থিদের পক্ষে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে সাদ এরশাদের নাম ঘোষণাও স্থগিত করা হয়। আজ দুপুর ১টায় বেগম রওশন এরশাদ সংসদ ভবনে পার্লামেন্টারি পার্টির সভা আহ্বান করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আজ দুপুরের পর মসিউর রহমান রাঙ্গা সংবাদ সম্মেলন করবেন। এ সময় জি এম কাদের এবং বেগম রওশন এরশাদ উভয়েই উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে রংপুর-৩ আসনে প্রার্থীর বিষয়ে সাদকে মেনে নিচ্ছেন না স্থানীয় নেতারা। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ইতিমধ্যে সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে ভাঙনের সম্ভাবনা নেই। কয়েক দিনে পার্টিতে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে অচিরেই এর অবসান হবে।’ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মোহা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দল পরিচালিত হলে আর কোনো সংকট থাকবে না।’

দুপক্ষের বৈঠক : গতকাল রাত ৮টায় রাজধানীর বারিধারা ক্লাবে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে জি এম কাদেরের পক্ষে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এবং রওশন এরশাদের পক্ষে মুজিবুল হক চুন্নু, ফখরুল ইমাম, এস এম ফয়সল চিশতী ও সেলিম ওসমান অংশ নেন। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন জি এম কাদের। রওশন এরশাদ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকবেন। বৈঠকে রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে রওশনপন্থিদের পক্ষে সাদ এরশাদকে মনোনয়নের দাবি জানানো হলেও বিষয়টি নাকোচ হয়ে যায়। জানতে চাইলে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, বৈঠক সফল হয়েছে। আমরা একটা সমঝোতায় আসতে পেরেছি। আজ দুপুরে পার্লামেন্টারি পার্টির সভায় জি এম কাদেরসহ সব এমপি অংশ নেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে পার্টি চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সিদ্ধান্ত নেবেন।

৩০ নভেম্বর জাপার কাউন্সিল : এয়ার আহমদ সেলিমের যোগদান অনুষ্ঠানে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় আগামী ৩০ নভেম্বর পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

কাউন্সিলে নেতা-কর্মীরাই পার্টির আগামী দিনের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। তিনি বলেন, এখনই দলকে আরও শক্তিশালী করতে পারলে আগামী দিনের রাজনীতিতে এবং দেশ পরিচালনার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পার্টি আরও এগিয়ে যাবে। প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলাম, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, এইচ এন এম শফিকুর রহমান, সুনীল শুভ রায়, আলমগীর সিকদার লোটন, মনিরুল ইসলাম মিলন।

সর্বশেষ খবর