সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দক্ষভাবে চীনের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষভাবে চীনের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে

অধ্যাপক রেহমান সোবহান

সিল্ক রোড বা নতুন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’- বিআরআই নিয়ে চীনের সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশকে দরকষাকষি করতে হবে বলে মনে করেন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেছেন, বিআরআই-তে বাণিজ্য সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। চীন বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের নেতৃত্বে আছে। এর সঙ্গে অন্য দেশের সমন্বয় করে চলতে হবে। এটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ব্যবস্থা। এটা যেন উপনিবেশবাদের মতো না হয়, এটা যেন অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে হয়। এতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সুযোগ আরও বাড়বে। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি আয়োজিত ‘বিআরআই : তুলনামূলক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে এ কথা বলেন সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, বিআরআই উদ্যোগে চীনে বাণিজ্য সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। তবে প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, ঋণের শর্ত- এসব বিষয় পরিষ্কার হওয়া দরকার। নতুন বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চীনের অবস্থান মেনে নিতে হবে। প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ বলেন, চীন-ভারতের বিশেষজ্ঞদের বিআরআই নিয়ে একসঙ্গে বসে আলোচনা করা প্রয়োজন। ভারত কেন বিআরআইয়ের বাইরে থাকবে এটা নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। চীন ও ভারত প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বিআরআই উদ্যোগ থেকে পরস্পরের অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়িয়ে তারাও লাভবান হতে পারে। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে অধ্যাপক রেহমান সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, বিআরআই-তে কে কত বিনিয়োগ করবে, তা সব দেশের জন্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন চীনা ঋণের কথা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এই টাকা ফেরত দিতে হবে। এ টাকা তো চীন উপহার হিসেবে দিচ্ছে না। বিশ্বে চীন দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বাজার। এটা বাংলাদেশের প্রবেশযোগ্য বাজার। চীনের সঙ্গে ব্যবসা এমনিতেই চলছে বাংলাদেশের। এখন চীনের কোন কোন খাতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সুযোগ আছে, সেটা দেখতে হবে। চীনের ব্যবসায়িক অংশীদারদের বাংলাদেশে নিয়ে আসতে হবে। তারা দেখবে- বাংলাদেশে রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন হচ্ছে। এটাও বিনিয়োগের জন্য একটা প্রণোদনা। আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে একটা সম্পর্ক উন্নত হবে। তবে দরকষাকষির দক্ষতা শুধু সরকারের ভিতরে নয়, আমাদের দেশের তো দক্ষতা আছে। চীনা অর্থনীতির সঙ্গে বেশ দক্ষতার সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে। বাংলাদেশকে এখন চীনের থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যেতে হবে। অধিবেশনের প্রধান অতিথি শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেন, এ দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা লাগবে। বিআরআই এই সুযোগ নেওয়ার ফোরাম হতে পারে। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়া ও বিআরআই উদ্যোগ আছে। আমরা সব উদ্যোগের সঙ্গে যাব। যখন আমরা এসব নিয়ে দরকষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব। অধিবেশনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমরা বাজার চাই, এটা সত্য। কিন্তু সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নেওয়া উচিত। অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বিআরআই কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশ নানাভাবে লাভবান হতে পারে। বিআরআই উদ্যোগ ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এ উদ্যোগ এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে। দিনব্যাপী সম্মেলনে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। বক্তব্য দেন সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সর ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক চেং মিন, ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিসের মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম।

সর্বশেষ খবর