মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চার বছরেও শেষ হয়নি তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার বিচার

৪৬ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ এক আসামির বয়স জটিলতাই বিলম্বের কারণ

আরাফাত মুন্না

রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসনি দালানে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা মামলার বিচার চার বছরেও শেষ হয়নি। শিশু আসামিকে সাবালক দেখিয়ে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করার কারণেই বিচারে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এদিকে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রমেও রয়েছে ধীরগতি। ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। গতকালও এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের ধার্য তারিখ থাকলেও বিচারকের শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে তা হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, অভিযোগপত্রভুক্ত ১০ আসামির মধ্যে এক আসামি শিশু হিসেবে গণ্য হওয়ায় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে এখন থেকে যত দ্রুত সম্ভব সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা হবে। আসামিপক্ষ বলছে, একজন আসামি শিশু হলেও পুলিশ সাবালক হিসেবে অভিযোগপত্র দেয়। বিষয়টি আদালতের নজরে আনার পর ওই আসামিকে শিশু হিসেবে গণ্য করে আদালত।

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর আশুরা উপলক্ষে হোসনি দালানের তাজিয়া মিছিলে গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় একজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। পরে পুলিশ চকবাজার থানায় পরদিন মামলা করে। তদন্ত শেষে পরের বছর ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, জননিরাপত্তা বিঘিœত করার জন্যই সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের পরিকল্পনা ও ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এ হামলা চালায়। হোসনি দালানে জঙ্গি হামলার এ মামলায় পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। এরপর মামলাটি গত বছর ১৪ মে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। জানতে চাইলে সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিভিন্ন আদালত ঘুরে গত বছর এই মামলাটি তাদের ট্রাইব্যুনালে আসে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। অভিযোগপত্রভুক্ত ১০ আসামির মধ্যে একজনের পক্ষে আদালতে দাবি করা হয়, ওই আসামি নাবালক। এর সপক্ষে জন্মসনদ, পরীক্ষার সনদ জমা দেয় আসামিপক্ষ। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই আসামিকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আইন অনুযায়ী, ওই আসামিকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে বলেন। পুলিশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। ওই শিশুর মামলাটি শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব নৃশংস এই জঙ্গি হামলার মামলায় বাকি সব সাক্ষীকে হাজির করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত ১০ আসামি হলেন- মাসুদ রানা ওরফে সুমন, কবীর হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আসিফ, আবু সাঈদ ওরফে সালমান, আরমান ওরফে মনির, রুবেল ইসলাম ওরফে সুমন ওরফে সজীব, চান মিয়া, ওমর ফারুক, হাফেজ আহসানউল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল ও একজন কিশোর আসামি। এদের মধ্যে চারজন জামিনে আছেন। বাকিরা কারাগারে।

 

সর্বশেষ খবর