শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কাউন্সিল নিয়েও শঙ্কা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ

মাহমুদ আজহার

বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কাউন্সিল নিয়েও শঙ্কা

দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল নিয়েও শঙ্কায় বিএনপি। ছাত্রদলের কাউন্সিলে আদালতের হস্তক্ষেপে স্থগিতাদেশের পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এই শঙ্কা বিরাজ করছে। দলের হাইকমান্ডের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, আগামীতে  বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সব সংগঠনই কাউন্সিলে নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি করা। কেন্দ্রীয় নেতাদের সফরকালে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও এ পরামর্শ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিল করার কথা ছিল। বিএনপিও সেই প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছিল। কিন্তু উৎসবমুখর প্রস্তুতির শেষে হঠাৎই আদালত ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের ওপর ‘অস্থায়ী’ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এরপর বিষাদের ছায়া নেমে আসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। বিস্মিত হন দলের নীতিনির্ধারকরাও। গতকাল বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ছাত্রদলের বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল উচ্চ আদালতে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। জানা যায়, সামনে মেয়াদোত্তীর্ণ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করার পথে এগোচ্ছিল বিএনপি। ছাত্রদলের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসায় হোঁচট খায় দলটি। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলোর সামনের কমিটিগুলো কাউন্সিলের মাধ্যমে করারও চিন্তাভাবনায় ছিল দলটি। ছাত্রদলের কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে ছিল নেতা-কর্মীরা। বেগম জিয়া মুক্তি পেলে ডিসেম্বরে বা নতুন বছরের শুরুতে বিএনপির কাউন্সিল করারও বিষয়টি মাথায় রেখেছিল দলটি। দলের মহাসচিব একাধিকবার কাউন্সিল করার কথাও গণমাধ্যমে বলেন। কিন্তু ছাত্রদলের ঘটনায় ছেদ পড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে। ছাত্রদল নিয়ে পরবর্তী করণীয় কি তা নিয়ে গত দুই দিন ধরে দীর্ঘ বৈঠকও করে বিএনপি। দলের আইনজীবী নেতা ও সাবেক ছাত্রনেতাদের মতামতও নেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতিও করতে দিচ্ছে না। সব কিছুই চলছে একতরফাভাবে। দেশে এখন একদলীয় শাসন চলছে। ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপরও সরকার হস্তক্ষেপ করেছে। আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রাখা হয়েছে। গণতান্ত্রিক চর্চার চেষ্টাতেও সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। আমরা দলকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সুসংগঠিত করতে চাই। সেখানে কাউন্সিল করতেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সূত্র মতে, সুষ্ঠুভাবে ছাত্রদলের কাউন্সিল সম্পন্ন হলে যুবদলের নতুন নেতৃত্বও একই পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। এরপর জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও একই পদ্ধতিতে করার কথা ছিল। ছাত্রদলের কাউন্সিলে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সব হিসাবই ওলটপালট করে দিয়েছে। বিএনপি নেতারা বলেন, বিএনপিতে ভালো কিছু হোক সেটা সরকার চায় না। কারণ, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শক্তিশালী কমিটি হলে নিজেদের হুমকি মনে করছে সরকার। তাই আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সরকার এই ষড়যন্ত্রটা করল। এতে বিএনপির চেয়ে সরকারেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে। দেশবাসী দেখেছে, সরকার রাজনীতিতে ভালো কিছু চায় না।  

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলে বাধা দিয়ে সরকার গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানল। দীর্ঘ চার মাস ধরে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাউন্সিল করতে যাচ্ছিলাম। তা সরকার বানচাল করে দিল।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক : ছাত্রদলের কাউন্সিলে নিষেধাজ্ঞা আসার পর গতকাল বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলের আইনজীবী ও সাবেক ছাত্রনেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মাঝপথে বেরিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আজকে বর্তমান সরকার যে একটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করছে, এই সংস্কৃতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আদালতকে দিয়ে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সবার অগোচরেই আদালতের এই স্থগিতাদেশ এসেছে। এখানে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপ আছে। বর্তমান সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের জবাবদিহিতা নেই। তারা দেশে গণতন্ত্রের ন্যূনতম পরিবেশ থাকুক, তা চায় না। দুঃখজনকভাবে তারা ব্যবহার করছে আদালতকে। যেটা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য শুভ হতে পারে না। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। দলের আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, নিতাই রায় চৌধুরী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান আসাদ, ওমর ফারুক ফারুকী, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, আজিজুল বারী হেলাল, শফিউল বারী বাবু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান ও আকরামুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর