সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
পুলিশ একাডেমিতে প্রধানমন্ত্রী

পুলিশ নিয়োগে স্বচ্ছতা ধরে রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পুলিশ নিয়োগে স্বচ্ছতা ধরে রাখতে হবে

গতকাল রাজশাহীতে কেক কেটে ৩৬তম বিসিএস (পুলিশ) প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে পুলিশ বাহিনীর নিয়োগে স্বচ্ছতা ধরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এবারের পুলিশ সদস্য নিয়োগে ঘুষ-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা (পুলিশ বাহিনী) যে নতুন সদস্য নিয়োগ দিয়েছেন একটি লোকও কোনো ধরনের দুর্নীতি বা ঘুষ দেওয়ার কথা বলতে পারেনি। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এবার নিয়োগ হয়েছে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে এ পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা আগামীতে সেভাবেই এগিয়ে যাবেন। গতকাল রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ বাহিনী নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে বলেই সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ দমন সম্ভব হয়েছে। জঙ্গি ও মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের এমনভাবে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান যেন জনগণ তাদের বন্ধু হিসেবে ভাবতে পারে। তিনি বলেন, আপনাদের ওপর যে দায়িত্ব তা যথাযথভাবে পালন করবেন; যাতে সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এমন কালো বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আমরা অভিযান চালাতে পারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আজকে দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ ইনশা আল্লাহ আমরা গড়ে তুলব। সেজন্য দেশে শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একান্তভাবে অপরিহার্য। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলতেন, ‘আপনারা স্বাধীন দেশের পুলিশ। আপনারা বিদেশি শোষকদের পুলিশ নন, জনগণের পুলিশ। আপনাদের কর্তব্য জনগণের সেবা করা, জনগণকে ভালোবাসা, দুর্দিনে জনগণকে সাহায্য করা।’ প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, জাতির পিতার সেই প্রত্যাশা পূরণে নবীণ এএসপিরা তাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময়ে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। গতানুগতিক অপরাধের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, মানব পাচার ইত্যাদি বৈশ্বিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো অশুভ সামাজিক ব্যাধি। সমাজ থেকে এসব অপকর্ম নির্মূলে এবং সমসাময়িক সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সবাইকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের অব্যাহত সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এ দেশের মাটিতে কোনোভাবেই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের ঠাঁই হবে না। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন সময় গুজব রটিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এসব গুজব রটনাকারীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজ আপনারা মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, একজন মানুষ তার সবচেয়ে বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তাই আপনাদের সেবা ও মানবিক আচরণের মাধ্যমে গণমানুষের আস্থা অর্জনে সচেষ্ট থাকতে হবে। জনগণের সমস্যাকে দেখতে হবে একান্ত আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের মনে পুলিশ সম্পর্কে যেন অমূলক ভীতি না থাকে সেজন্য জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সমাজের নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে জনবান্ধব পুলিশ গঠনে আপনাদের অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চাই।

বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ হেলিকপ্টারে করে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের আইজি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী ও পুলিশ একাডেমির কমাড্যান্ট নাজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে ৮টি কন্টিনজেন্টে মোট ১১৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, অওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর