মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দুই দলের রাজনীতিতে দুই চিত্র

জেলা-উপজেলা সম্মেলন তিন বছরে পারেনি আওয়ামী লীগ

তিন মাসে করতে চান নেতারা

রফিকুল ইসলাম রনি

সাংগঠনিক কাজে মনোযোগী না হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঠিক সময়ে জেলা-উপজেলা সম্মেলন করতে না পারায় যুগ্ম ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের উদ্দেশে দলীয় সভানেত্রী বলেন, ‘এরপর তোমরা না পারলে আমি দলের যারা মহিলা নেত্রী আছে তাদের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেব।’ গত শনিবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় প্রধানের এমন কড়া বার্তার পর তিন বছরে যে কাজ করতে পারেননি, সেই কাজ তিন মাসে শেষ করার মিশন নিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। গত তিন বছরে মাত্র একটি জেলায় সম্মেলন করেছেন তারা।  দলীয় সূত্রমতে, দলের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির মধ্যে ৭৭টির মেয়াদ শেষ হয়েছে। অধিকাংশ জেলায় সম্মেলন হয়েছে পাঁচ থেকে ছয় বছর আগে। ১৮ বছর সম্মেলন হয় না এমন উপজেলার সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর গত তিন বছরে মাত্র একটি জেলার সম্মেলন হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার সম্মেলন হয়। আর সব জেলা কমিটিই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলের সভানেত্রীর কড়া হুঁশিয়ারির পর গত রবিবার মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা, পৌর ও থানা, ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তৃণমূল নেতারা বলছেন, গত ৩ বছরে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর করলেও সম্মেলন নিয়ে তেমন মনোযোগী ছিল না। দায়িত্ব পাওয়ার পর কেন্দ্রের নেতারা নিজ নির্বাচনী আসনগুলো নিয়েই বেশি মনোযোগী ছিলেন। ফলে জেলা-উপজেলায় সম্মেলন জট শুরু হয়। বিশেষ করে উপজেলার সম্মেলন জট ছিল প্রকট। প্রায় অর্ধশত উপজেলায় ৫ বছর থেকে শুরু করে ১৮ বছর পর্যন্ত সম্মেলন নেই। তৃণমূল নেতারা বলছেন, সাড়ে তিন বছরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যা করতে পারেননি, সেই কাজ তিন মাসে করবেন কীভাবে? কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি, মেয়াদ উত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে না পারলেও অধিকাংশই করা সম্ভব হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী বুধবার দলের সম্পাদকম লীর সভায় জেলা-উপজেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তিন মাসের মধ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা-উপজেলায় সম্মেলন শেষ করতে পারব বলে আশা করছি। পুরোপুরি সম্ভব না হলেও অধিকাংশই হয়ে যাবে।’ জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৬৭টির কমিটির মেয়াদ নেই। সিলেট বিভাগের চার জেলার তিনটিতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে। সুনামগঞ্জে ১৭ বছর পর সম্মেলন হয় ২০১৬ সালে। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই অধিকাংশ সময় ঢাকায় এবং দেশের বাইরে থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে সাংগঠনিক কর্মকা । সিলেট জেলায় ২০১১ সালে সর্বেশেষ সম্মেলন হয়। হবিগঞ্জে ২০১৩ সালের ২৫ জুন সম্মেলন হয়। রংপুর বিভাগের মধ্যে পঞ্চগড়ে ২০১২ সালের ২৪ ডিসেম্বর, ঠাকুরগাঁওয়ে ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর, দিনাজপুরে ২০১২ সালের ডিসেম্বর, রংপুরে ২০০৮ সালে, কুড়িগ্রামে ২০১৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, গাইবান্ধায় জেলা সম্মেলন ২০১৬ সালের ১২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রংপুর ও নীলফামারী জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় সম্মেলনের তারিখ ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা সম্মেলনের পর জেলা সম্মেলন শুরু হবে। নির্ধারিত সময়েই সব সম্মেলন করতে পারব বলে আশা করি। ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পর ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ময়মনসিংহ জেলা কমিটি ভেঙে ঘোষণা করা হয় নতুন জেলা ও মহানগর কমিটির। ২০১৫ সালে জামালপুর ও শেরপুর এবং ২০১৬ সালে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে ২০০৬ সালের ২৭ জুন চট্টগ্রাম মহানগরে সম্মেলন হলেও ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটি কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ২০১৫ সালের ১৬ জুলাই কেন্দ্র থেকে যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল, তারও মেয়াদ শেষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, চাঁদপুরে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি, কুমিল্লা দক্ষিণে ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লা উত্তরে ২০১৬ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি, ফেনীতে ২০১২ সালের ২৫ ডিসেম্বর, লক্ষ্মীপুরে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ, নোয়াখালীতে ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর, কক্সবাজারে ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি, ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর বান্দরবানে, ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়িতে, ২০১২ সালের ৮ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে সর্বশেষ সম্মেলন হয়। বরিশাল বিভাগের মধ্যে ২০১২ সালে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে পটুয়াখালী, ২০১৬ সালে ভোলা, ২০১৬ সালে পিরোজপুর এবং ২০১৪ সালে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি, নওগঁাঁয় ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর, নাটোরে ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর, জয়পুরহাটে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর, বগুড়ায় ২০১৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।  খুলনা বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে কুষ্টিয়া ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, মেহেরপুর, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সম্মেলন ছাড়া ১৪ বছর পর ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ২০১৩ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৪ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে টাঙ্গাইল, গাজীপুর মহানগর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এবং ২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ নামে দুটি কমিটি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর