মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পুঁজিবাজারের বিশ্বাস-অবিশ্বাস দূর করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারের বিশ্বাস-অবিশ্বাস দূর করতে হবে

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে কোনো মূল্যে পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। এখান থেকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস দূর করতে হবে। গতকাল শেরেবাংলা নগরে নিজ দফতরে শেয়ারবাজার সম্পর্কিত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এদিকে শেয়ারবাজারে গত কয়েকদিন টানা সূচক পতন ঘটলেও সোমবার অর্থমন্ত্রীর এ বৈঠকের খবরের পর সূচকের উত্থান ঘটেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতির মৌলিক এলাকা হলো পুঁজিবাজার। সুতরাং এই মৌলিক এলাকাকে আমরা কখনো অবহেলা করতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীও সব সময় পুঁজিবাজার উন্নয়নে কথা বলেন। প্রায় সব শ্রেণির মানুষই পুঁজিবাজারে জড়িত। এই বাজারে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সরকারের সব সংস্থা এক মত পোষণ করেছে পুঁজিবাজার উন্নয়ন করতেই হবে যে কোনো মূল্যে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি যতটা গতিশীল, আমাদের পুঁজিবাজারকে ততটা গতিশীল হিসেবে দেখতে চাই। এই বাজারে যে বিশ্বাস-অবিশ্বাস আছে কয়েকটি কারণে, এগুলো দূর করতে হবে। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে যিনি অপরাধ করবেন তাকেই শাস্তির আওতায় আনা হবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করে পুঁজিবাজারে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই বাজারে আমরা শতভাগ আস্থা অর্জন করতে চাই। এখন থেকে আর কেউ অপবাদ দিতে পারবেন না যে, আমরা ন্যায় বিচার করি না। অথবা আমরা কারোর প্রতি দুর্বল। পুঁজিবাজারে যিনি অপরাধ করবেন, তিনি যেই হোন না কেন! যত বড় শক্তিশালী হোন না কেন আইন অনুযায়ী তার ন্যায় বিচার করা হবে।

তিনি বলেন, সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আনা হবে। অচিরেই আরও ভালো ভালো সরকারি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা হবে। তবে সরকারি শেয়ারের ক্ষেত্রে কিছুটা সময় দিতে হবে। আমাদের এগুলোর আপডেটেড ব্যালেন্সশিট তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া ভ্যালুয়েশনসহ সার্বিক কাজ করতে কিছু সময় লাগবে। তবে এগুলোকে পুঁজিবাজারে আনা হবে। আর যেগুলো নতুন কোম্পানি হচ্ছে সেগুলোকেও পুঁজিবাজারে আসার জন্য শর্ত দিয়ে দেওয়া হবে।

২০০৫ সাল থেকে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো কোনো সরকারই আনতে পারেনি। এর জন্য সরকারের ভিতরের সরকার অর্থাৎ আমলারা দায়ীÑসাংবাদিকের করা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে যা হয়েছে তা তো আমি বদলাতে পারব না। তবে এগুলো আসবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন সরকারি কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসুক। সুতরাং আমি মনে করি না যে, এখানে এমন কেউ আছে যারা উনার (প্রধানমন্ত্রী) বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার যাতে অতিমূল্যায়িত না হয় সে জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা বলেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের মূল্য যাতে যথাযথ হয় সেই কাজও করা হবে। কোনো কোম্পানির শেয়ার মূল্য অতিমূল্যায়িত হয়ে আবার পড়ে যায়- এমন অবস্থা যেন না সৃষ্টি হয় সে জন্যও আমরা কাজ করব। সে জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ঘুরে ঘুরে অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িতের বিষয়গুলো দেখবে। সারা বছর জুড়েই কমিটি এ কাজ করবে। কমিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কারখানা চালু আছে কিনা কিংবা এগুলো বন্ধ হয়ে গেছে কিনা তাও দেখবে। কোম্পানিগুলোর স্বাস্থ্য কতটা ভালো এটিও যাচাই করবে কমিটি। প্রাথমিক গণ প্রস্তাবগুলো (আইপিও) যাতে যথাযথ ভ্যালুতে আসতে পারে আমরা সেদিকেও নজর দেব। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি যারা এখনো বিশ্বাস করেন তারা যাতে না ঠকে সে ব্যবস্থা আমরা করব। এ জন্যই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পুঁজিবাজার যাতে একটা অবস্থানে যেতে পারে সে জন্য সব করা হবে। কমিটি কীভাবে কাজ করবে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেখবে এটা। এখানে ইন্টারন্যাল অডিট ডিভিশন কাজ করবে। তাদের কাজ হবে এফআরসিসহ কোম্পানির প্রাইসিংগুলো দেখা। দীর্ঘদিন ধরে যদি কোনো কোম্পানির ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকে আর তাদের শেয়ার যদি বাজারে কেনা-বেচা হয় সেটা কমিটি দেখবে। প্রত্যেকটা ব্যালেন্সশিট দেখা হবে, মূল্যায়ন করা হবে।

সূচকের উত্থান : শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অর্থমন্ত্রী। গতকাল অর্থমন্ত্রীর এই বৈঠকের খবরে সূচক বেড়েছে শেয়ারবাজারে। ফলে দেশের উভয় শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। টাকার পরিমাণে লেনদেনও বেড়েছে। জানা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫৯ পয়েন্টে। ডিএসইতে ৩৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩১৭ কোটি ৮ লাখ টাকার। ডিএসইতে ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬১টির বা ৪৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১৩৬টির বা ৩৮ শতাংশের এবং ৫৬টি বা ১৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের। কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ন্যাশনাল টিউবসে ২১ কোটি ১৯ লাখ টাকার এবং ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে উঠে আসে স্টাইলক্রাফট।

সর্বশেষ খবর