বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আতঙ্কে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিতর্কিতরা

জিরো টলারেন্সে প্রধানমন্ত্রী, অভিযান চলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতঙ্কে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিতর্কিতরা

দল ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের মধ্যে। মাদক সেবন ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় গত শনিবার রাতে। গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। দলের অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির খবরে গা-ঢাকা দিতে শুরু করেছে অপকর্মকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর এই অ্যাকশনকে স্বাগত জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে- এ কথা বিরোধী পক্ষও স্বীকার করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নজর এখন উন্নয়নের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিত করা। তিনি সঠিক পথেই হাঁটছেন। সে কারণে তিনি প্রথমে নিজ ঘর থেকেই অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন অব্যাহত রাখলে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো অপরাধীই অপরাধ করে ছাড় পাবে না। তবে দলের শীর্ষ মহল থেকে ঘোষণা দিয়ে অ্যাকশন শুরু করা এটাই প্রথম। এতে জনমনে আস্থা ফিরবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপ। এর ফলে অপরাধীরা আর অপরাধ করার সাহস পাবে না। তিনি বলেন, যারা নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে মনে করতেন তারাও নিজেদের গুটিয়ে নেবেন। কারণ শেখ হাসিনার আমলে অপরাধীদের ছাড় নেই। প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দেশের জনগণ সরকারের সঙ্গে থাকবে।’ সূত্রমতে, টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর দল ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবার আর কোনো ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনিয়ম, দুর্নীতি, দলের গঠনতন্ত্র ও নীতি-আদর্শবিরোধী যে কোনো কর্মকা  করলে ছাড় পাবে না কেউই। জাতীয় সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোয় একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অনৈতিক অভিযোগের বিরুদ্ধে তার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির অংশ হিসেবে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শোভন-রাব্বানীর পরিণতি দেখে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি তাদের চারপাশ ঘিরে যারা ছিলেন, তাদের হয়ে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন, তারা আতঙ্কে রয়েছেন।

গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সতর্ক করা হয় যুবলীগের নেতাদের। মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করে জানিয়ে ক্ষুব্ধ শেখ হাসিনা বলেন, সাবধান না হলে আমি জঙ্গিবাদ যেমনভাবে দমন করেছি, অস্ত্রবাজদেরও তেমনভাবে দমন করব। ছাত্রলীগ-যুবলীগের পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন মহানগর ও কেন্দ্রের একাধিক নেতাও আতঙ্কে রয়েছেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধেও দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছেন তিনি। সত্যতা মিললে তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশনে যাওয়া হবে বলে জানা গেছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা কোথায় কী করছেন দলের বিভিন্ন সূত্র এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের অনেকের আমলনামা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন তিনি। এ ব্যাপারে বিতর্কিতদের একাধিকবার সতর্ক করেছিলেন, অনেকেই নিজেদের শুধরে নিচ্ছেন। অনেকেই বেপরোয়া রয়ে গেছেন। সে কারণেই তিনি এখন অ্যাকশন শুরু করেছেন। আগে নিজ ঘর দিয়েই অ্যাকশন শুরু করেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর