শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইসির চুরি হওয়া ল্যাপটপসহ হালনাগাদ কর্মী রিমান্ডে

এনআইডি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত দুই পরিবারের ২০ সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কেলেঙ্কারির ঘটনায় মোস্তাফা ফারুক নামে নির্বাচন কমিশনের আরেক হালনাগাদ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ সময় তার কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনের ল্যাপটপ, মডেম ও পেনড্রাইভ, সিগনেচার প্যাড ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর গতকাল বিকেলেই তার পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেহ মো. নোমান এ আদেশ দেন। এর আগে তদন্ত সংস্থার পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে পাঁচদিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে ডাকা হয়। এরপর গতকাল তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সিএমপির কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এনআইডি জালিয়াতির হোতা জয়নাল আবেদিনকে জিজ্ঞাসাবাদে ফারুকের নাম উঠে আসে। এরপর তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এনআইডি কেলেঙ্কারির কথা স্বীকার করেন। পরে নগরীর তার হামজারবাগের বাসা থেকে নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

এদিকে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পরিচয়পত্র (এনআইডি) কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দুই পরিবারের কমপক্ষে বিশ সদস্য। দুই পরিবারের প্রায় সবাই নির্বাচন কমিশনের ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অফিসে কর্মরত। তারা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে শত শত রোহিঙ্গার হাতে তুলে দেন বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র। এনআইডি কেলেঙ্কারির ঘটনায় কয়েকদিনের ব্যবধানে গ্রেফতার হওয়া দুই হোতা জয়নাল আবেদীন ও মোস্তাফা ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়ে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল স্বীকার করেছে তার পরিবারের ১০ সদস্য নির্বাচন কমিশনে কর্মরত রয়েছেন। তাদের সিংহভাগই এনআইডি জালিয়াতিতে জড়িত।’ কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি ফারুকের কয়েকজন স্বজন এনআইডি জালে ফারুককে সহায়তা করতেন।’

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি এনআইডি তৈরি চক্রের চট্টগ্রামে কয়েকটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। এ চক্রে দালাল ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী সম্পৃক্ত রয়েছেন। তারা ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দেন বাংলাদেশি এনআইডি। এ চক্রের একটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন ডবলমুরিং নির্বাচন অফিসের সহায়ক জয়নাল আবেদীন। জয়নাল ছাড়াও তার বোনের জামাই, খালাতো ভাইসহ কমপক্ষে ১০ আত্মীয় ঢাকা চট্টগ্রামের নির্বাচন অফিসের বিভিন্ন দফতরে চাকরি করছেন। তারাও জয়নালের সহায়ক হিসেবে কাজ করছে বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তার স্ত্রী ছাড়াও সৈকত বড়ুয়া, শাহজামাল, পাভেল বড়ুয়া, বয়ান উদ্দিন নামের চার ব্যক্তি জয়নালকে সহযোগিতা করতেন। ডাটা ইনপুটের কাজ করতেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক দুই কর্মচারী সাগর ও সত্যসুন্দর দে। এনআইডি জালিয়াতি চক্রের আরেক হোতা মোস্তাফা ফারুকের পরিবারের ভাই, চাচাতো ভাইসহ কয়েকজন এ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তারা মোস্তাফা ফারুকের এনআইডি জালিয়াতিতে সহায়তা করতেন। গ্রেফতার হওয়া ফারুক নির্বাচন কমিশনের স্থায়ী কর্মচারী না হলেও নির্বাচন কমিশনের অনেকেই তার এ অপরাধ কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

সর্বশেষ খবর