মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বলেছিল ২০১৭ সালে

সাখাওয়াত কাওসার

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশকে অ্যাকশন নিতে বলেছিল ২০১৭ সালে

২০১৭ সালে পুলিশ সদর দফতরে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠির কপি

রাজধানীতে ক্যাসিনোয় জুয়া খেলা বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েও অভিযানে নামেনি পুলিশ। উল্টো, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নীরবতায় ফ্রিস্টাইলেই চলেছে ক্যাসিনো। জন্ম নিয়েছে নতুন নতুন ক্যাসিনো। ক্রীড়াসামগ্রী ও মূলধনী যন্ত্রের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনোর জন্য বিদেশ থেকে আনা হয়েছে রুলেট, পোকার টেবিল ও স্লট মেশিন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, থানা থেকে মাত্র ৫০০ গজের মধ্যে দিনরাত এই খেলাসহ নানা অপকর্ম চললেও তা ধরা পড়েনি পুলিশের চোখে। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের মাসহারা আর ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতার বিশেষ প্রশ্রয়ের কারণে দেখেও না দেখার ভান করত পুলিশ। এমন অভিযোগও উঠেছে, চলমান সাঁড়াশি অভিযানের সময় অনেক ক্যাসিনোর বিদেশি অংশীদারের পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই নির্দেশের পরই জামান টাওয়ারের ছয়তলা ভবনের ক্যাসিনো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। অভিযান চালানো হয় উত্তরার রিক্রিয়েশন ক্লাবে।

এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের সূত্রানুযায়ী, ২০১৭ সালের ৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-২ শাখার তৎকালীন উপসচিব তাহমিনা বেগম স্বাক্ষরিত (স্মারক নম্বর-৪৪.০০.০০০০.০৫৭.০৪.০০৩.১৭-৩০৮) পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর লেখা চিঠিতে রাজধানীতে ক্যাসিনো নামক জুয়ার আস্তানায় জুয়া খেলা বন্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। ওই চিঠিতে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ফুয়াং ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, সৈনিক ক্লাব, এজাক্স ক্লাব, কলাবাগান ক্লাব ও পল্টন থানাধীন পুরানা পল্টনে অবস্থিত জামাল টাওয়ারের ১৪ তলায় একটি ক্যাসিনোর বিষয় উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে। পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ মেট্রোর মাধ্যমে তা বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হয়। এরপর ডিএমপি জামান ট্ওায়ারে অভিযান চালায়। অনেক সময় প্রভাবশালী শীর্ষ নেতাদের কারণে পুলিশ অ্যাকশনে যেতে পারেনি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে তার কোনো তথ্য জানা নেই। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হলেও রহস্যজনক কারণে তা স্থবির হয়ে যায়। নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা গেছে, সব ক্যাসিনো থেকে মোটা অঙ্কের মাসহারা পৌঁছে যেত রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ও দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্যের কাছে। ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির কারণে গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে থাকা যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, গোলাম কিবরিয়া শামীম ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম ফিরোজ এরই মধ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টদের। পিলে চমকে ওঠা তথ্যে অনেকটাই বিব্রত তদন্তসংশ্লিষ্টরা। তবে তাদের দেওয়া তথ্য নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ওইসব ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িতরা এতটাই প্রভাবশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নিতে গেলে আমাদের চাকরি নিয়েই টানাটানি শুরু হয়ে যেত।’ তবে চলমান অভিযানে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত নেপালিদের পালিয়ে যেতে কারা সহায়তা করেছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাঈদের অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে দুই মাস আগে জানিয়েছিলেন। তবু মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মেয়র গতকাল নগর ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চলমান শুদ্ধি অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশবাসী এ অভিযানকে সমর্থন দিচ্ছেন। এ অভিযানের সফল পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর