মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফতুল্লার জঙ্গি আস্তানায় শক্তিশালী বোমা-অস্ত্র

আটক ৩, নানা সরঞ্জাম উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ফতুল্লার জঙ্গি আস্তানায় শক্তিশালী বোমা-অস্ত্র

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গতকাল এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে গতকাল ভোর থেকে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা ওই বাড়ি থেকে আইএসের ভিডিওতে দেখানো টয়গানের সঙ্গে মিল থাকা দুটি টয়গানসহ শক্তিশালী বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ডিভাইস, খেলনা পিস্তল, সুইসাইডাল সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ সময় তিনজনকে আটক করা হয়। উদ্ধার করা শক্তিশালী বোমাগুলো পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়। ফলে দফায় দফায় বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকা। শেষ বিস্ফোরণে একটি বাড়িতে আগুনও লেগে যায়। ঢাকা থেকে আসা বোমা ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্কিয় করেন। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, গতকাল ভোরে নারায়ণগঞ্জে খবর ছড়িয়ে পড়ে ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটেন সদস্যরা। খবর পেয়ে তাদের সহযোগিতায় ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য। সঙ্গে যোগ দেয় সোয়াত। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে তিনজনকে। তারা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদীনের বড় ছেলে আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার ফরিদ উদ্দিন রুমি ও তার স্ত্রী অগ্রণী ব্যাংকের কর্মী জান্নাতুল ফুয়ারা অণু। আগে আটক করা হয় মিজান নামে জেএমবির এক সক্রিয় সদস্যকে। দুপুর ১২টায় গণমাধ্যমকর্মীদের জঙ্গি বাড়ি প্রসঙ্গে প্রাথমিক তথ্য দেন ডিএমপির সহকারী কমিশনার কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম। অভিযান শেষে বেলা আড়াইটায় তিনি জানান, সেখানে পাওয়া চারটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। সেখানে তিনটি রেডি বোমা ছিল। আর বাকি ১৫-২০টি আইডি বোমা তৈরির প্রস্তুতি চলছিল। বেশ কিছুসংখ্যক ডিভাইস, খেলনার দুটি পিস্তল (যেগুলো শুটিয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়), সুইসাইডাল সরঞ্জাম বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। যেগুলো একটি ক্যানের মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মনিরুল ইসলাম জানান, অভিযানের পর সেখান থেকে উদ্ধার হওয়া টয়গানের (খেলনা অস্ত্র) সঙ্গে আইএসের একটি ভিডিওর তরুণদের হাতে থাকা টয়গানের অনেকটা মিল আছে। কয়েক মাস আগে আইএস এই ভিডিও প্রকাশ করে। তিনি আরও জানান, জঙ্গি বাড়িটি থেকে যে টয়গান ভেস্ট উদ্ধার করা হয়েছে তার সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকায় পুলিশের ওপর কয়েকটি হামলা ঘটনার আলামতের মিল রয়েছে। গত এপ্রিল থেকে ঢাকায় পুলিশের ওপর পাঁচটি ঘটনায় যে কটি হামলা হয়েছিল তার সঙ্গে এই বাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত আলামতের যথেষ্ট মিল রয়েছে। ওইসব হামলার ঘটনায় এখানে আটকদের কেউ কেউ সরাসরি জড়িত থাকতে পারেন। এমনকি হামলা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে হামলায় সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। জঙ্গি বাড়ি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি একটি নতুন সেল। তারা তাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তা হয়ে উঠছে না। ধারণা করছি, এ সেলটি (বাড়ি) ছয়-সাত মাস ধরে গড়ে উঠেছে।’ আটকদের বিষয়ে তিনি জানান, ঢাকা থেকে মিজান নামে জেএমবির এক সক্রিয় সদস্যকে আটকের মাধ্যমে বাকিদের আটক করা হয়েছে। এখানে যাদের আটক করা হয়েছে তার মধ্যে কারও কারও সরাসরি সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ ও সরাসরি হামলায় সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জয়নাল আবেদীনের এক ছেলে ও তার স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু জয়নাল আবেদীন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে। অভিযানের সূত্রপাত প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা থেকে মিজানুর রহমান নামে জেএমবির এক সক্রিয় সদস্যকে আটকের পরই বের হয়ে আসে ফতুল্লা তক্কার মাঠ এলাকার ওই জঙ্গি বাড়ির ঠিকানা। মিজানের পরিচয় সম্পর্কে এখনো পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি। শনিবার রাতে মিজানকে আটক করা হয়। মিজান তথ্য দেন, ফতুল্লার তক্কার মাঠ এলাকার বাসিন্দা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম জয়নাল আবেদীনের ছেলে ফরিদ উদ্দিন রুমি ও তার স্ত্রী জান্নাতুল ফুয়ারা অণুর বাড়িতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও বোমা তৈরির ল্যাব রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ফরিদ উদ্দিন রুমিকে তক্কার মাঠের পাশের এলাকার ব্যাংক কলোনির নিজ বাড়ি থেকে আটক করেন। পরে তার স্ত্রীকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে গতকাল ভোর ৬টায় ফরিদের বাবার অন্য পৈতৃকবাড়ি তক্কার মাঠ এলাকার টিনশেড ওই জঙ্গি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এদিকে স্থানীয় এক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সন্তানদের কেউ জঙ্গি সম্পৃক্ততায় জড়িত তা আমরা কোনো দিন বুঝতে পারিনি। বিষয়টিতে আমরা অবাক হয়েছি। বর্তমানে আমরা এলাকার সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছি।’ তিনি জানান, যে বাড়ি থেকে বোমাগুলো উদ্ধার করা হয় সেটি মূলত রুমির বাবা জয়নাল আবেদীন ভাড়া দিতেন। কিছুদিন আগে ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে সেখানে গরুর খামার করেন। ছয়-সাত মাস যাবৎ গরুর খামার বন্ধ। জয়নাল আবেদীন ও তার ছেলেমেয়েদের ভালোভাবে চেনেন এমন কয়েকজন এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ‘জয়নাল আবেদীনের চার সন্তানের সবাই খুবই মেধাবী। দুই ছেলে রুমি ও রফিক এবং দুই মেয়ের সবাই মেধাবী। এক মেয়ে চিকিৎসক। পরিবারের সবাই ধার্মিক। রুমি ও রফিক এলাকায় মাথা নিচু করে চলাফেরা করতেন। তেমন কারও সঙ্গে মিশতেন না। লেখাপড়া শেষ করে রুমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ছোট ভাই রফিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন। তবে ছয়-সাত মাস ধরে রফিকের মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর