বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের, সেখান থেকেই আসতে হবে সমাধান

প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘে দেওয়া হবে চার প্রস্তাব

রুহুল আমিন রাসেল, শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, নিউইয়র্ক থেকে

রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের, সেখান থেকেই আসতে হবে সমাধান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রলম্বিত রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের, সমাধান আসতে হবে সেখান থেকেই। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, রোহিঙ্গা সংকট একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর মূল  মিয়ানমারে গভীরভাবে প্রোথিত। সুতরাং এ সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভিতরেই খুঁজে পেতে হবে। শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতরে স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ ও ইসলামী সহযোগী সংস্থার যৌথ আয়োজনে ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস : এ ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন। তিনি জানান, তিনি এ বিষয়ে ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চলমান অধিবেশনে চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। এ প্রস্তাবগুলো হলো- ১. রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন বিষয়ে মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা সুস্পষ্ট করতে হবে। এ জন্য রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কী করছে, তাও সুস্পষ্টভাবে বলতে হবে। ২. বৈষম্যমূলক আইন ও চর্চা পরিত্যাগ করতে হবে এবং রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে ‘যাও ও দেখ’- এই নীতিতে পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। ৩. রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। ৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ ও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতা দূর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনেও তিনি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তাতে কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়নসহ রাখাইন রাজ্যে একটি বেসামরিক নিরাপদ পর্যবেক্ষণ এলাকা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও ছিল। তিনি বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো রকম সমাধান ছাড়াই আমরা আরও একটি বছর পার করে দিয়েছি। মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে ও তাদের দেশে ফেরত না যাওয়া অবদি সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গারা ৬ হাজার ৮০০ একরের বেশি বনভূমিতে আশ্রয় নিয়েছে। এতে বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাংলাদেশ আশ্রয়, খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশনসহ রোহিঙ্গাদের সব ধরনের মানবিক সহায়তা দিচ্ছে। অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ, ওআইসি মহাসচিব ড. ইউসেফ বিন আহমেদ আল-ওথাইমেন ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল-আসাফ বক্তৃতা করেন। বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরাও যোগ দেন। তারা এসেছেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, সার্বিয়া, ফিলিপাইন ও গাম্বিয়া থেকে।

শেখ হাসিনা-ট্রাম্প কুশল বিনিময় : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একই দিনে তিন দফা কুশল বিনিময় হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এ সময় দুই নেতা একে অপরের খোঁজখবর নেন। তারা বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন। শেখ হাসিনা ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ সময় হাস্যোজ্জ্বল দেখা যায়। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার রাত ৯টায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন কার্যালয়ে একান্ত আলাপচারিতায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাম্পের তিন দফা সাক্ষাতের তথ্য জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার দিনের শুরুতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেখা হয়। পরে দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজ সভায় সাক্ষাৎ হয় দুই নেতার। একই দিনে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নৈশ্যভোজ সভায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘দুই নেতার তিন দফা কুশল বিনিময়ে কী আলাপ হয়েছে’। জবাবে তিনি বলেন, কুশল বিনিময়ে সাধারণত একজন নেতা আরেকজনের খোঁজখরব নেন। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর