শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঘুষ দেওয়া জীবনের অংশ বলে মনে করে ৭৫ শতাংশ মানুষ

টিআইবির প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন ঘুষ দেওয়াটা তাদের জীবনেরই অংশ। তাই কোনো অভিযোগ ছাড়াই তারা ঘুষ দেন। ২৫ শতাংশ মানুষ এটাকে অনিয়ম মনে করলেও অভিযোগ করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হওয়ার আশঙ্কা করেন। আর ঘুষ না দিলে  সেবা পাবেন না, এমনটি মেনে নিয়েছেন দেশের ৮৯ শতাংশ মানুষ। তাদের সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয় সরকারি সনদ (জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন) নিতে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে দুর্নীতির এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস ২০১৯ এবং তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ১০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে গতকাল টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘তথ্য অধিকার আইন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ : আইনের প্রথম দশকের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা সভায় গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। নানা সেবা পেতে ঘুষ দিয়েছেন এমন মানুষদের ওপর গবেষণাটি চালানো হয় বলে জানায় টিআইবি। অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ড. অনন্য রায়হান, অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণাটি উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও গবেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী। তিনি বলেন, জরিপকৃতদের ৬৫ শতাংশ মনে করেন তথ্যের ফলে দুর্নীতি কমে। তবে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জানেন মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ। এদিকে জরিপকৃতদের রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়ে সামাজিক আন্দোলনের প্রতি আস্থা বেশি। কারণ, তারা মনে করেন বেশির ভাগ রাজনীতিবিদ দুর্নীতিবাজ।

গবেষণা মতে, ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা সরাসরি ঘুষ চেয়েছেন। ৪০ শতাংশ কর্মকর্তা একটু গোপনে অর্থ দাবি করেছেন। বাকি ১০ শতাংশ কর্মকর্তা সেবা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে অফিসের বাইরে গিয়ে অর্থ দাবি করেছেন। ঘুষ দিয়ে সেবা গ্রহীতাদের ৬০ শতাংশ মনে করেন, শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি কমানো যাবে না। আইন করলেই হবে না, এর প্রয়োগ দরকার। ২০ শতাংশ মনে করেন, যারা শাস্তি  দেবে তারাই দুর্নীতিতে জড়িত। ১৫ শতাংশ মনে করেন, দুর্নীতির কারণে শাস্তি হবে না। ৫ শতাংশ মনে করেন, শাস্তি দিতে গেলে ঝামেলা বাড়বে।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইনের প্রথম দশকে ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও তা এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন, বিশেষ করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাকস্বাধীনতা ও তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনাকে খর্ব করছে। তথ্য অধিকার আইন যথাযথ বাস্তবায়ন হলে দুর্নীতি কমে আসবে। কিন্তু পিএসসি, ইসি, দুদক, মানবাধিকার কমিশনসহ সব কমিশনে অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা জনগণের জানার অধিকারকে বাধার মুখে ফেলে দেয়। বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় বাধা তথ্য কমিশন। সেখানে তথ্য জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব  দেওয়া হয়নি। ড. অনন্য রায়হান বলেন, ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা ভীষণভাবে সংকুচিত হয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের কার্যকর প্রয়োগ হলেই এ অবস্থা থেকে বের হওয়া সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর