শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সম্রাট এখন কোথায়

গা-ঢাকা দিয়েছেন অপরাধ জগতের অনেকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্রাট এখন কোথায়

যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট কোথায়? সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র আলোচনায় সম্রাট। কেউ কেউ বলছেন, সম্রাট অবস্থান করছেন এক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে। কারও কারও দাবি, সম্রাট রয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে। সর্বশেষ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এসেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন সম্রাট। তবে অভিযান শুরুর পর দলীয় কার্যালয়ে এবং কাকরাইলের নিজ অফিসে অবস্থান করলেও গত রবিবারের পর থেকে সম্রাটকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আর এ বিষয়ে কোনো কথাও বলছে না আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থাই। এ অবস্থায় সর্বমহলে একটাই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে, সম্রাট এখন কোথায়? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, যুবলীগ নেতা সম্রাট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতেই রয়েছেন। সম্রাটের ব্যাপারে উঠে আসা তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। ব্যাটেবলে মিললেই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কারণ সম্রাটের দেশ ত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। তিনি কোনোভাবেই যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, এ জন্য দেশের সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও গোলাম কিবরিয়া শামীম গ্রেফতারের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সম্রাট দম্পতির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সম্রাটের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টির চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করেছে এনবিআর, দুদকসহ সরকারের কয়েকটি সংস্থা। অন্যদিকে গা-ঢাকা দিয়েছেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী যুবলীগ দক্ষিণের নেতা আরমানুল হক আরমান, মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে সাঈদ, সম্রাটের ভাই বাদল ও জুয়াড়ি খোরশেদ আলম।

ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চললেও সম্রাটকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না- গত সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে এমন প্রশ্ন করলে জবাবে বলেছিলেন, ‘গডফাদার-গ্র্যান্ডফাদার বলতে কিছু নেই। আমরা চিনি অপরাধীকে। অপরাধী যে বা যারাই হোক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, খালেদ গ্রেফতারের পর ভড়কে যান সম্রাট। যে কোনো মূল্যে গ্রেফতার এড়াতে শুরু করেন নানা মহলে লবিং। দলীয় হাইকমান্ডকে দফায় দফায় বুঝাতে চেয়েছেন দলের প্রতি তার অবদানের কথা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে দাবি করেছেন, দলের হাইকমান্ড এরই মধ্যে সম্রাটের ব্যাপারে অনেকটাই নমনীয় হয়েছেন। তবে তাকে নানা শর্ত দেওয়া হচ্ছে। সম্রাটের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সুবিধা নেওয়া প্রভাবশালীরাই এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। শর্ত কবুল করলে আপাতত বিপদ কেটে যাচ্ছে তার। গ্রেফতার হচ্ছেন না তিনি। তবে কড়া নজরদারির মধ্যেই রাখা হবে সম্রাটকে।

অন্যদিকে সম্রাটের অবস্থান নিয়ে কেউ বলছেন, গ্রেফতার আতঙ্কে নেতা-কর্মী বেষ্টিত হয়ে কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তিনি টানা ছয় দিন অবস্থান করেন। সেখানে শতাধিক যুবক তাকে পাহারা দেন। সেখানে সবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ বলছেন, বর্তমানে নিরাপদ কোনো স্থানে আত্মগোপনে আছেন ক্যাসিনো সম্রাট। রবিবারের পর বনানী ডিওএইচএস এলাকার একটি বাসায় তিনি অবস্থান করেন। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। পাশাপাশি তার সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্রাট তাদের নজরদারিতেই রয়েছেন এবং ঢাকাতেই আছেন। সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় তারা।

সর্বশেষ খবর