সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

কার আয় কত, কীভাবে চলে বের করতে হবে

ছাড় পাবে না দুর্নীতিবাজরা

রুহুল আমিন রাসেল, নিউইয়র্ক থেকে

কার আয় কত, কীভাবে চলে বের করতে হবে

নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মারকুইজ হোটেলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -আবু তাহের খোকন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আরেকটা জিনিস আমি দেখতে বলে দিয়েছি, তা হলো কার আয়-উপার্জন কত, কীভাবে জীবনযাপন করে, সেগুলো আমাদের বের করতে হবে। তাহলে আমরা সমাজ থেকে এই ব্যাধিটা, একটা অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে পারব, আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারব। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার বিকালে টাইমস স্কয়ারের ম্যারিয়ট মারকুইজ হোটেলে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় মঞ্চে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

সংবর্ধনায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, দুর্নীতি-অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খলতায় জড়িত থাকলে দলের লোকদেরও ছাড় দেওয়া হবে না। দুর্নীতি না হলে দেশের চেহারা পাল্টে যেত। আমরা ব্যাপকভাবে উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছি। যে পরিমাণ উন্নয়ন প্রকল্প আমরা নিচ্ছি, তার প্রতিটি টাকা যদি সঠিকভাবে ব্যয় হতো, ব্যবহার হতো, আজকে বাংলাদেশ আরও অনেক বেশি উন্নত হতো পারত। এখন আমাকে খুঁজে বের করতে হবে এখানে কোথায় লুপহোল, কোথায় ঘাটতিটা, কারা কোথায় কীভাবে এই জায়গাটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, এই অসৎ পথ ধরে কেউ উপার্জন করলে, অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা বা অসৎ কাজে যদি ধরা পড়ে, তবে সে যেই হোক না কেন, আমার দলের হলেও ছাড় হবে না। এর বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সৎভাবে জীবনযাপন করতে চায়, তাদের জন্য বা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য সৎভাবে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে যায়, যখন অসৎ উপায়ে উপার্জিত পয়সা সমাজকে বিকলাঙ্গ করে দেয়। কারণ একজনকে সৎভাবে চলতে গেলে তাকে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে চলতে হয়। আর অসৎ উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এই ব্র্যান্ড, ওই ব্র্যান্ড, এটা সেটা হৈচৈ ... খুব দেখাতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ফলাফলটা এই দাঁড়ায়, একজন অসৎ মানুষের দৌরাত্ম্যে যারা সৎভাবে জীবনযাপন করতে চায় তাদের জীবনযাত্রাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ ছেলেমেয়েরা ছোট শিশু, তারা তো আর এতটা বোঝে না। ভাবে, ওরা এভাবে পারে তো আমাদের নেই কেন। এটা স্বাভাবিক, তাদের মনে এ প্রশ্নটা জাগবে। অত ছোট ছোট বাচ্চারা, তারা সৎ-অসতের কী বুঝবে। তারা ভাবে আমার বন্ধুদের এত আছে, আমাদের নেই কেন? স্বাভাবিকভাবে মানুষকে অসৎ উপায়ের পথে ঠেলে দেবে। সমাজের এই বৈষম্য দূর করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্নীতি পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, সেটাও অব্যাহত থাকবে। এই মাদক একটা পরিবার ধ্বংস করে, একটা দেশ ধ্বংস করে। এর সঙ্গে কারা আছে তাও আমরা খুঁজে বের করব। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক দূর করে বাংলাদেশের মানুষকে আমরা উন্নত জীবন দিতে চাই। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস যে কেবল বাংলাদেশের সমস্যা না, গোটা বিশ্বের জন্যই এটি একটি হুমকি, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের উন্নতির জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। জনগণের শক্তিই বড় এবং আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতেই বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নতি হয় এবং জনগণ উন্নত জীবন লাভ করে বলেই আওয়ামী লীগের ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে। শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় দেশের শিক্ষাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া এবং বাজেট বাড়ানোর কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। এত উন্নয়নের পরও দেশে একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী ‘পরশ্রীকাতর’ আচরণ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে যত ভালো কাজই করা হোক, তারা কখনই ভালো বলবে না। সেই বুদ্ধিজীবীদের তিনি বিএনপি-জামায়াতের সময় দেশে সন্ত্রাস, দুর্নীতির কথা মনে করিয়ে দেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর দুর্নীতির কথাও বলেন তিনি। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। আট দিনের এ সফর শেষে ১ অক্টোবর ভোরে প্রধানমন্ত্রীর দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর