সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

এবার লড়াই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে

জিরো টলারেন্স সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ অনিয়ম নিয়ে

গোলাম রাব্বানী

এবার লড়াই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে

এবার লড়াই প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিচ্ছে সরকার। এখন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, ওয়াসা, বিমান, বিআরটিএ, বিআরটিসি, বিদ্যুৎ খাত, রাজউক, বিটিসিএল, ডাক বিভাগ, রেলওয়ে, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, খাদ্য অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, রূপপুরের বালিশ কা-, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরসহ (এলজিইডি) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের শেষ নেই। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করতে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় ডুবছে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সরকার যায় সরকার আসে, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা উন্নত হয় না। বরং দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানগুলো ভয়াবহভাবে পথে বসতে শুরু করেছে। কর্মকর্তারা লুটেপুটে যাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠান। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানিক অনিয়ম-দুর্নীতিতে সরকারের সাফল্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকটি আলোচিত দুর্নীতির ঘটনায় নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এ জন্য সব ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য পরামর্শ দিয়েছে বিশ্লেষক মহল।

প্রকল্প অনুমোদনের আগেই প্রশ্ন উঠেছে ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসকারী বিহারিদের জন্য ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে তাদের এই ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা। এ জন্য ‘ঢাকা মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত অবাঙালিদের বসিলায় পুনর্বাসনের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১০১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এই প্রকল্পের অধীনে একটি বেড লিফট বসাতে খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ছয়টি লিফটে ব্যয় হবে ২০ কোটি ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তবে একনেক সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।

একটি সিএনসি লেদ মেশিন চালানো শিখতে দুই ধাপে বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ২০ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ করে তারা জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম সফর করবেন। সফরে লেদ মেশিন চালানো শিখবেন সংস্থাটির বৈজ্ঞানিকরা। জানা যায়, সিএনসি মেশিন মূলত লেদ, মিলিং ও রাউটারের সমন্বয়ে গঠিত, যা আধুনিকতার ছোঁয়ায় কম্পিউটারাইজড নিউমেরিক্যাল কন্ট্রোল নামে পরিচিত (সিএনসি)।

সরকারি পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশনের (বিআরটিসি) অধিকাংশ ডিপো নষ্ট গাড়ির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। বিআরটিসির ২২টি ডিপোর অধিকাংশই মেরামতের অযোগ্য পরিত্যক্ত গাড়ির কারণে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে কেনা এসব বাস ঘোষিত লাইফ টাইমের এক-তৃতীয়াংশ সময়ের মধ্যেই বিকল হয়ে পড়েছে। সরকারি এই সংস্থাটির মোট বাসের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখন অচল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে বিআরটিসিতে যেসব গণপরিবহন কেনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে ভলবো দ্বিতল বাসগুলো ছাড়া বাকি সবই  নিম্নমানের। ভলবো বাসগুলোও কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণ না করে নির্ধারিত লাইফ টাইমের আগেই বিকল করে ডিপোবন্দী করে ফেলা হয়। সম্প্রতি বিভিন্ন ডিপোতে অচল হয়ে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে ১২৯টি নিলামে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি। এর মধ্যে দোতলা ভলবো বাস, দোতলা বাস, একতলা বাস, ট্রাক, কার ও অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে টার্গেট নিয়েই দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সরকারের ঘাটে ঘাটে চলছে দুর্নীতির উৎসব। বিশেষ করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা অনেক বেশি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সর্বশেষ রিপোর্টগুলোতেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটায় দুর্নীতি বন্ধে সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাই অভিযান শুরু করার জন্য। দেশে এই প্রথম একটি অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান যেন চলে। কেননা প্রধানমন্ত্রী নিজের দলের অনেক ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিকেও ছাড়ছেন না। এটা অত্যন্ত সুন্দর উদ্যোগ। অভিযান শুধু ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে হবে তা নয়, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে। বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে যারা ব্যাংক কেলেঙ্কারি করছে, যারা আদালতে আইনের আশ্রয় নিয়ে ট্যাক্স দিচ্ছে না, যারা শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। আর অভিযান চালাতে হবে সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এটা শুরু যখন হয়েছে, অবশ্যই শেষ করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি বন্ধ না হয়, ততক্ষণ অভিযান চালাতে হবে। কারও বা কোনো মহলের চাপে যেন সরকার এ থেকে সরে না আসে। এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশে প্রতিদিনকে বলেন, দুর্নীতি অপরাধ। যে কোনো খাতে দুর্নীতিই অপরাধ। অভিযান ব্যাপক ও গভীর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উচিত হবে বহুমুখী কৌশলপত্র তৈরি করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সব জায়গায় হাত দিলে তো হবে না। বিশেষ করে বড় বড় দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত এবং যারা ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের টার্গেট করতে হবে। এসব প্রাধান্য দিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে কার্যকর হবে বলে আশা করা যায়।

ইউজিসি সচিব খালেদ দুর্নীতির অভিযোগে ‘ওএসডি’ : দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. মো. খালেদকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউজিসির সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ খবর নিশ্চিত করেছেন। কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, গত এপ্রিলে ইউজিসির সহকারী পরিচালক নিয়োগ পরীক্ষার কমিটিতে ছিলেন মো. খালেদ। তার মেয়ে যে পরীক্ষার্থী ছিলেন, তা তিনি কমিশনকে অবহিত করেননি। বিষয়টি জানাজানি হলে একটি তদন্ত কমিটি করে ইউজিসি। সেই তদন্তে নিয়োগ পরীক্ষায় তার প্রভাব খাটানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার কমিশন সভায় খালেদকে ওএসডি করার সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর