বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংবর্ধনার প্রস্তাব নাকচ প্রধানমন্ত্রীর

ভারত দেবে শান্তি পুরস্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক ও দিল্লি প্রতিনিধি

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গতকাল দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামীকাল তিনি চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন। নিউইয়র্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি ফ্লাইট (বিজি-১২৮) ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ  প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন সচিব মো. মুহিবুল হক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সরকারি কর্মকর্তাদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন এরকম দুজন মন্ত্রী জানান, এ সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবার জাতিসংঘে দুটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ায় দলীয় প্রধানকে দলের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা দিতে চান। জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘কীসের সংবর্ধনা? আমি মানুষের জন্য কাজ করি। কোনো সংবর্ধনার দরকার নাই।’ উল্লেখ্য, এবার জাতিসংর্ঘে সাধারণ অধিবেশনে যুবকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং টিকাদান কর্মসূচিতে বংলাদেশের ব্যাপক সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে যথাক্রমে ইউনিসেফের ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ ও জিএভিআই-এর ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার পান প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি গণভবনে যান। এ সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে দলের নেতারা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা অভিনন্দন জানান।

ভারত দেবে শান্তি পুরস্কার, ১০ চুক্তির প্রস্তুতি : এদিকে শেখ হাসিনাকে ‘শান্তি পুরস্কার’ দেবে ভারত। ভারতের মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা সংস্থা এশিয়াটিক সোসাইটি এ পুরস্কার দেবে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকতে পারেন। এই প্রথম ভারত কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে শান্তি পুরস্কার দিচ্ছে। এ ছাড়া গত রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা ঘোষণা করেছে। বলা হয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রী হায়দরাবাদ হাউস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। তার মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ ডিজেল পাইপলাইন রয়েছে। শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত। ইতিমধ্যেই আট চুক্তির বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। বাকি দুটোর বিষয়ে শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্ত হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠকে। শনিবার নয়াদিল্লির হায়দ্রাবাদ হাউসে এই বৈঠকের পরই যোগাযোগ, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, কৃষি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী চার দিনের এ সফর শুরু করবেন। সফরসূচি অনুসারে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর ভারতীয় শাখা ইন্ডিয়ান ইকোনমিক ফোরাম-২০১৯-এ যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল ৩ অক্টোবর সকালে চার দিনের সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছবেন। ওই ফোরামে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি তুলে ধরবেন। এর পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিগত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের ব্যাপক সাফল্যের কথাও উল্লেখ করবেন। তিনি ভারতের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাবেন। শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের হাইকমিশন আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। এ ছাড়া তিনি ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ নেতাদের সঙ্গে শুক্রবার যৌথভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ঐতিহাসিক হায়দরাবাদ হাউসে। পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। বিকালে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া সফররত সিঙ্গাপুরের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হেং সুয়ে কেট শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তিনি রবিবার ভারতের কংগ্রেস পার্টির প্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম ভিত্তিক ফিচার ফিল্ম তৈরির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। প্রধানমন্ত্রী রবিবার বিকালে নয়াদিল্লি থেকে স্বদেশে রওনা হবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, তিস্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যুসহ সব বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

 তবে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে আমরা কোনো ধারণা পোষণ করতে পারছি না। ভারতের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকে এনআরসি প্রশ্নে বাংলাদেশকে উদ্বিগ্ন না হতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উল্লেখ করে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এটি তাদের ইস্যু, তাদেরকেই এটি হ্যান্ডেল করতে দিন। এনআরসি নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই।

সর্বশেষ খবর