বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড-বিসিএসসিএলের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে আজ থেকে বাণিজ্যিক সম্প্রচারে যাচ্ছে দেশের ৩৫টি টেলিভিশন চ্যানেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এতে আগের তুলনায় সম্প্রচারের গুণগতমান বাড়ার পাশাপাশি চ্যানেলগুলোর খরচ কমবে। গতকাল রাজধানীর বাংলামোটরে বিসিএসসিএল ভবনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বিষয়ে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহারে দেশের চ্যানেলগুলো কী ধরনের সুবিধা পাবে- জানতে চাইলে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো গত ১৯ মে থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তখনো তারা পাশাপাশি অন্য স্যাটেলাইটের সুবিধা নিত। কিন্তু আজ থেকে দেশের সব টিভি চ্যানেল আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে সম্প্রচারে আসবে। স্যাটেলাইট ব্যবহারে বাংলাদেশি চ্যানেল তিনটি সুবিধা পাবে। প্রথমত, এটি আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট, নিজেদের প্রযুক্তি। দ্বিতীয়ত, দেশের টাকা দেশেই থাকছে। চ্যানেলগুলোকে স্যাটেলাইটের অর্থ পরিশোধে ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হবে না। তৃতীয়ত, আগের তুলনায় সম্প্রচারের গুণগতমান বাড়বে। আমরা বিদেশি স্যাটেলাইটের তুলনায় কম মূল্যে সার্ভিস দেওয়ায় চ্যানেলগুলো আর্থিকভাবে লাভবান হবে। আমাদের নতুন স্যাটেলাইট হওয়ায় গুণগতমান, সিগন্যাল পাঠানোর সক্ষমতা জোরদার হবে।’ নতুন লাইসেন্স পাওয়া চ্যানেলগুলোর পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথ ও স্পেসস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত ব্যান্ডউইথ ও স্পেস আছে। ৭০ শতাংশ ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ দেওয়া স্পেসে কিছু কারিগরি সমস্যা রয়েছে। এগুলো আমাদের কারিগরি বিভাগ দেখছে।’ দু-তিন দিনের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘নতুন প্রায় ১২টি টিভি চ্যানেল পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে আসার কথা রয়েছে। এ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি চ্যানেল দেখতে কিছুটা সমস্যা হবে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। দুই সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখব। মাসখানেকের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। তবে টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইটের সঙ্গে আলাদা চুক্তি করে মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করলে আমাদের এই লেনদেনের মধ্যে পড়বে না। আমরা আমাদের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করব।’
গ্রাউন্ড স্টেশন দূরে হওয়ায় চ্যানেলগুলোকে বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে হচ্ছে। এ খরচ চ্যানেলকে বহন করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান বলেন, ‘গ্রাউন্ড স্টেশন দূরে হওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। স্যাটেলাইট ব্যবহারে প্রযুক্তির বিভিন্নতায় চ্যানেলগুলোকে একটা মডিউল কিনতে হবে। এটা টিভি স্টেশনের নিজেদের সম্পত্তি। আধুনিকীকরণ ও গুণগতমান বাড়ানোর জন্য আমরাও টিভি স্টেশনকে নতুন মডিউল কিনে দেব। টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-অ্যাটকোর সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে কথা হয়েছে।’ ক্যাবলের মাধ্যমে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে টিভি স্টেশনে সংযোগ দেওয়া হবে। খোঁড়াখুঁড়িতে ক্যাবল কাটা পড়বে না এ নিশ্চয়তা টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে কীভাবে দেওয়া হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোঁড়াখুঁড়ির শঙ্কা অমূলক নয়, সত্যি। দেশে সারাক্ষণই উন্নয়নকাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। তাই ক্যাবল কেটে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। এজন্য দুই ভাবে গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে টিভি স্টেশনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা মাল্টিপল পথ তৈরি করেছি। একটা মাটির নিচ দিয়ে গেছে, অন্যটা মাটির ওপর দিয়ে। নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ বজায় রাখতে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করায় সামিট গ্রুপকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। আমরা মাইক্রোওয়েভে যাওয়ার চেষ্টা করছি। গাজীপুর ও রাঙামাটি দুই গ্রাউন্ড স্টেশনেই সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুর থেকে রাঙামাটি পর্যন্ত স্পেশাল সংযোগ রয়েছে। কোনো কারণে একটা স্টেশনে বিঘ্ন ঘটলে আরেকটা সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে যাবে।’ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সামর্থ্যরে কত শতাংশ বিক্রি হয়েছে এবং বাকি সামর্থ্য বিক্রির টার্গেট বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ড. শাহজাহান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সামর্থ্যরে ৩০-৪০ শতাংশ বিক্রি করেছি। এগুলো দেশের সব টিভি চ্যানেলের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোয় বাকি সামর্থ্যও বিক্রির আশা করছি। নেপাল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া ফিলিপাইনও আগ্রহ জানিয়েছে। আমরা আশা করছি, ভারতের সঙ্গে যদি বাণিজ্যিক চুক্তি হয় তাহলে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাব। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। পাইপলাইনে থাকা টেলিভিশনগুলোকে এ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সম্প্রচারের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া টেলিমেডিসিন, টেলিএডুকেশন, বিনোদন, ব্যাংকের এটিএম বুথের সেবা স্যাটেলাইট ব্যবহারের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে এখনো পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনতে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যান্ডউউথের দাম কমে গেছে। এজন্য আমরা এখন একটু কম উৎসাহ দেখাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ১৪টির সেবাকাজে ব্যবহার হচ্ছে। পুরো সামর্থ্য বিক্রি করতে পারলে আট বছরের মধ্যে দেশীয় বাজার থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পুরো খরচ উঠে আসবে।’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২-এর পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘প্রক্রিয়া বেশ জোরেশোরেই এগোচ্ছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ থাকায় এ মেয়াদে আমাদের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের কাজ আরও বেশি নির্দিষ্ট করা হবে। আমাদের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি তৈরি করা হবে। এ স্যাটেলাইট দেশের কৃষি, মৎস্য, সমুদ্র, আবহাওয়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অথবা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ লঞ্চ করা হবে।’