বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলবে, আমার আত্মীয় হলেও ছাড় নয় : প্রধানমন্ত্রী

কে কাকে আশ্রয় দেন, আমলনামা আমার কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলবে, আমার আত্মীয় হলেও ছাড় নয় : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান শুরু করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা ব্যবস্থা নেব, সে যেই হোক না কেন। এখানে দল, মত, আত্মীয়, পরিবার বলে কিছু নেই। কাউকে ছাড় নয়। যারাই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। গতকাল রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর বাণিজ্যিক সম্প্রচার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চলতি বাজেটে ১৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নেওয়া বা বাস্তবায়ন করার সময় মাঝে মাঝে দেখি যে, উইপোকা খেয়ে ফেলে। এখন এই উইপোকাগুলো ধরা আর সেগুলোকে বিনাশ করার চেষ্টা করছি। আর জনগণের কষ্টার্জিত প্রতিটি টাকা যেন সঠিকভাবে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার হয়, তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা নিয়েছি। তিনি বলেন, আমার হারানোর কিছু নেই; আমি বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। মানুষ একটার শোক সইতে পারে না, আমরা দুই বোন একই দিনে সব হারিয়েছি। সেই বেদনা, শোক বুকে নিয়েও আমার ফিরে আসা। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, দেশে এসে দায়িত্ব নেওয়ার পর একটাই কর্তব্য মনে করি, সেটা হচ্ছে আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন; এদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছেন; দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। সেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোটাই হচ্ছে আমার একমাত্র কর্তব্য। নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোর পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের গল্পগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে সম্প্রচার মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা আমাদের বিরুদ্ধে বলেন, বিরোধিতা করেন, আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মিথ্যা অপপ্রচার যেন না হয় এ ব্যাপারে দয়া করে সতর্ক থাকবেন। কেননা মিথ্যা অপপ্রচার দেশের মানুষের ভিতর সন্দেহ ও সংঘাত সৃষ্টি করে। সেটা যেন না হয়। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু না হোক, গত ১০ বছরে কিছু কাজ তো করেছি। এটা তো অস্বীকার করতে পারবেন না। সেটাও একটু প্রচার করবেন, এটা আমরা চাই। কেননা আপনি তখনই কাজ করে সফলতা পাবেন, যখন মানুষের ভিতর তা নিয়ে একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। তাই এমন কিছু করবেন না যে আমাদের দেশের মানুষ এত কিছু পাওয়ার পরেও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, দিশাহারা হয়ে যায়। কাজেই যতটুকু ভালো কাজ করেছি ততটুকুর প্রচার আমি দাবি করছি।  সম্প্রচার মাধ্যম কর্তৃপক্ষ এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত যে, আমাদের সব টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিকভাবে সম্প্রচার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আজকে আমরা একই সঙ্গে সেই সম্প্রচার উদ্বোধন করছি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের টেলিভিশন সম্প্রচারের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ হলো। একটি নতুন অগ্রযাত্রা শুরু হলো। বিদেশি স্যাটেলাইট ভাড়া করে এতদিন সম্প্রচার কাজ চালানোর বদলে এখন থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করায় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। রসিকতা করে তিনি বলেন, এখন সেই টাকা কী করবেন, সেটা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে। কিছু টাকা দান-টান করে দিয়েন গরিব মানুষের জন্য। কারণ অনেক টাকাই আপনাদের বেঁচে যাচ্ছে। এ ছাড়া টাকা অর্জন করা, পাঠানোসহ নানা ঝামেলাও ছিল। কবে আবার কে কোন মামলায় পড়ে যান সেটাও চিন্তা ছিল! সেই দুশ্চিন্তাটাও কিন্তু দূর হয়ে গেল।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সম্প্রচারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক সম্প্রচারের পথে অনেক বাধাই দূর হয়ে যাবে। এতদিন পরনির্ভরশীল হয়ে থাকা লাগত, এখন আর তা লাগবে না। আমরা এখন নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পেলাম, আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার একটা সুযোগ পেলাম,’ চ্যানেল মালিকদের বলেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার সন্তান এবং তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কৃতিত্ব তুলে ধরে বলেন, আমি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী, ডিজিটাল শব্দটি আমি জানতাম না। এটা আমাকে দিয়েছিল সজীব ওয়াজেদ জয়।

অনির্ধারিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী : গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কড়া বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের কারণে আমার দলের নেতা-কর্মীরা মার খাচ্ছে, তারা দূরে সরে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত থেকে দলে ভিড়ে এসব অনুপ্রবেশকারীই দলের বদনাম করছে। তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে দেওয়া হবে। এসব অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজকে কেউ শেল্টার দেবেন না। কে কাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন- সবার আমলনামা আমার কাছে আছে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন থেকে দেশে ফেরার পর এবং আজ বৃহস্পতিবার ভারত যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তখন অনির্ধারিত বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ   হাসিনা চলমান অভিযান অব্যাহত রাখা হবে জানিয়ে বলেন, যারা দলে অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন তাদের আমলনামাও আমার হাতে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যা বলার বলে দিয়েছি। এ সময় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ফেনীর সাবেক এমপি জয়নাল হাজারীকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনয়ন দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘বিতর্কিত ও দুর্নীতিবাজদের জন্য কেউ  কোনো তদ্বির নিয়ে আসবেন? কাউকে বাঁচাতে চাইবেন? আমি কিছু করতে পারবো না।’ দলীয় নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কে কী করেছেন আমি সব জানি। অপরাধীদের কেউ শেল্টার দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এ সময় তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘ক্যাসিনো খেলেন? ক্যাসিনো ব্যবসা করেন? আমি ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের জন্য ভাসান চরে থাকার ব্যবস্থা করব।’ বিএনপি নেত্রী খালেদা প্রসঙ্গে আলোচনায় স্থান পায়। এতে বলা হয়, যা হওয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। এসময় প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কোনো উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলবা না। তার (খালেদা জিয়া) বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়।’ বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলন হবে। জানা গেছে, আগামী ৩০ নভেম্বর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কংগ্রেস (যুবলীগের সম্মেলনের নাম কংগ্রেস) অনুষ্ঠিত হতে পারে। জানা গেছে, গতকাল গণভবনে দুই দফা বৈঠক হয়। এ বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে  বেগম মতিয়া চৌধুরী, মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, একেএম এনামুল হক শামীম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, হারুনুুর রশীদ, মৃণাল কান্তি দাশ, আফজাল হোসেন, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, সুজিত রায় নন্দী, আবদুস সোবহান গোলাপ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আনোয়ার হোসেন, ইকবাল হোসেন অপু, গোলাম কবির রাব্বানী চিনু প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর