বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রধান জেলে, শামীম রিমান্ডে

চলছে তদন্ত, লোকমান ফিরোজ খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান জেলে, শামীম রিমান্ডে

ছয় মাসের জেল দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অনলাইন ক্যাসিনো মাফিয়া সেলিম প্রধানকে। তবে তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের অপরাধীদের কানেকশন নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে জাপান, থাইল্যান্ড, দুবাইয়ে তার কার্যক্রম কী ধরনের ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া সেলিম প্রধানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন উত্তর কোরিয়ার নাগরিক রয়েছেন। সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা হয়েছে। গতকাল সকালে র‌্যাব-১-এর এক কর্মকর্তা মামলা দুটি করেন। গুলশান থানায় হওয়া মাদক মামলায় সেলিম প্রধান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত সহকারী রোমান ও আক্তারুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে টেন্ডার রাজা জি কে শামীমকে আবারও ৯ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে র‌্যাব। জেরার মুখে রয়েছে মোহামেডান ক্লাবের সদস্য সচিব লোকমান, ক্যাসিনো খালেদ এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন শফিকুল আলম ফিরোজ। এদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। আগামী ২/১ দিনের মধ্যেই ফের অভিযান শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেলিম প্রধানের আয়ের উৎস তদন্ত করতে যেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, তিনি বেশির ভাগ সময় বিদেশে থাকেন। বাংলাদেশে যখন তিনি চলাফেরা করেন, তার গাড়িতে এমপির স্টিকার ব্যবহার করেন। আর থাইল্যান্ডে তিনি তার গাড়িতে বিশেষ স্টিকার ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন চলাফেরায়। যা থাইল্যান্ডের উচ্চপর্যায়ের লোক ব্যবহার করে থাকেন। সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সদস্য সেলিম প্রধানের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তার ব্যাপারে তদন্তের গভীরে যতই যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তারা ততই হতবাক হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের সদস্যদের মতোই তার লাইফ স্টাইল।

সূত্র জানায়, সেলিম প্রধানের চাচাতো ভাই ঘনিষ্ঠ সহোচর সায়েমকেও গোয়েন্দারা খুঁজছে। এই সায়েম সেলিম প্রধানের অর্থ মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করার দায়িত্ব পালন করতেন। সায়েম এখন আত্মগোপনে রয়েছে।

মামলা দায়ের

অনলাইন ক্যাসিনোর মূলহোতা সেলিম প্রধানসহ আটজনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন উত্তর কোরিয়ার নাগরিক। এ ছাড়া সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও মামলা হয়েছে। গতকাল সকালে র‌্যাব-১-এর এক কর্মকর্তা মামলা দুটি করেন। গুলশান থানায় হওয়া মাদক মামলায় সেলিম প্রধান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত সহকারী রোমান ও আক্তারুজ্জামানকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের করা মামলার আসামি করা হয়েছে সেলিম প্রধানসহ আটজনকে। এরা হচ্ছে সেলিম প্রধানের ব্যক্তিগত সহকারী রোমান, সীমান্ত রনি, শান্ত ও আক্তারুজ্জামান। এ ছাড়াও এই মামলায় উত্তর কোরিয়ার তিন নাগরিককেও আসামি করা হয়। এদের একজনের নাম মি. তু বা মিস্টার তু বলে জানা গেছে। গত মঙ্গলবার সেলিম প্রধানের বাসায় অভিযান শেষে দেওয়া ব্রিফিংয়ে তার ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাগরিক মি. তু-কে অভিযুক্ত করে র‌্যাব-১।

গত সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে নিয়ে মঙ্গলবার দিন ও রাতে তার গুলশানের বাসা ও বনানীর অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা, মাদক ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়। এ ছাড়া দুটি হরিণের চামড়াও জব্দ করা হয়েছে। হরিণ হত্যার দায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের ভ্রাম্যমাণ আদালত সেলিম প্রধানকে ছয় মাসের কারাদ- দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

ফের রিমান্ডে জি কে শামীম

রাজধানীর গুলশান থানার অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং (অর্থ পাচার) আইনের মামলায় ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে ফের ৯ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম আসামিকে রিমান্ডের এ আদেশ দেন।

এর আগে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড শেষে জি কে শামীমকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে অস্ত্র মামলায় আরও সাত দিন এবং মানি লন্ডারিং মামলায় ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে অস্ত্র মামলায় চার দিন এবং মুদ্রা পাচার আইনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি চায় বিচারক।

অর্থ পাচারের মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনের মামলা ছাড়াও অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা রয়েছে। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে চালানো অভিযানে জি কে শামীমের অফিসের লোহার সিন্দুক থেকে নগদ অর্থ, চেক বই, এফডিআর ও বিদেশি মুদ্রা পাওয়া যায়। সেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও ৯ হাজার ইউএস ডলার পাওয়া যায়। এ ছাড়া আসামির মায়ের নামে ১০টি এফডিআরে মোট ১৬৫ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকাসহ ৩৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও চেক বইয়ের পাতা জব্দ করা হয়।

অস্ত্র মামলায় রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়, ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রকাশ পায় যে, এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম (জি কে শামীম) একজন চিহ্নত চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক ও জুয়া ব্যবসায়ী (ক্যাসিনো) হিসেবে পরিচিত। এজাহারনামীয় অন্য আসামিরা (জি কে শামীমের সাত দেহরক্ষী) দীর্ঘদিন ধরে নিজ নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র প্রকাশ্যে বহন, প্রদর্শন ও ব্যবহার করে লোকজনের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেন। টেন্ডারবাজি, মাদক ও জুয়ার ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল, গরুর হাটে চাঁদাবাজি করে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হওয়ার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হলেও ব্যাপক তদন্তের প্রয়োজন আছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে নিজ কার্যালয় থেকে জি কে শামীমকে সাত দেহরক্ষীসহ আটক করে র‌্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অর্থ পাচার আইনে তিনটি মামলা হয়। এর আগে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি চালিয়ে আসা শামীম রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারি কাজে তার দাপটের খবর সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।

সর্বশেষ খবর