শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
দিল্লিতে ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে প্রধানমন্ত্রী

আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ

এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় চিন্তিত নয় বাংলাদেশ

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) আয়োজিত ইকোনমিক সামিটের কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি ডায়ালগ অন বাংলাদেশে অংশগ্রহণ করেন -পিআইডি

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির কেন্দ্র হয়ে ওঠার বিপুল সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসের দরবার হলে ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ সম্ভাবনা, বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেন। ৪০টি দেশের ৮০০ প্রতিনিধি দুই দিনের এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। আজ সম্মেলনটি শেষ হবে। সমাপনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা দেবেন। শেখ হাসিনা বলেন, পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এবং ভারতের ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি। আমাদের নিজস্ব ১৬ কোটি মানুষ ছাড়াও প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারের যোগাযোগের পথ হতে পারে বাংলাদেশ।’ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে উত্তম পরিবেশ বিরাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী বিশেষ করে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে শিক্ষা, হালকা প্রকৌশল শিল্প, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, অটোমোটিভ শিল্প, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলোয় বিনিয়োগ করার সময় এখন। তিনি আরও বলেন, ‘আজ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি স্বাধীন ও উদার বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। বিনিয়াগবান্ধব বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরদের জন্য আইনি সুরক্ষা, উদার রাজস্বব্যবস্থা, মেশিনপত্র আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়, আনরেস্ট্রিকটেড এক্সিট পলিসি, সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ও পুঁজি নিয়ে চলে যাওয়াসহ নানাবিধ সুবিধা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেছি। এর মধ্যে ১২টি অঞ্চল ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। দুটি অঞ্চলকে ভারতের বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক প্রস্তুত করা হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের এই ব্যাপক উন্নয়নের জন্য সামাজিক মূল্যবোধ ও বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রশংসা করে বলেন, অনেকেই বাংলাদেশকে ‘৩ কোটি মধ্য ও উচ্চবিত্ত মানুষের একটি বাজার’ ও ‘অলৌকিক উন্নয়নের দেশ’ হিসেব দেখে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত এবং শোষণহীন সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁর সেই লক্ষ্যই আমাদের ২০২১ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা কোরিয়ায় ১২টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট রপ্তানি করেছি। বাংলাদেশে তৈরি চারটি জাহাজ ভারতে আসছে। সম্প্রতি রিলায়েন্স বাংলাদেশে তৈরি বিপুল পরিমাণ রেফ্রিজারেটর কিনেছে। বাংলাদেশে ৬ লাখ আইটি ফ্রিল্যান্সারের বিশাল গোষ্ঠী রয়েছে।’ এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে পালাম এয়ারফোর্স স্টেশনে পৌঁছান। ভারতের নারী ও শিশুকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ বিমানবন্দরে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে হোটেল তাজ প্যালেস নিয়ে যাওয়া হয়। সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন।

এনআরসি নিয়ে মোদির প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট : ভারতের নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকের সঙ্গে ভোজসভাপূর্ব এক সভায় মিলিত হন। সেখানে তাকে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রশ্ন ছিল ভারতের এনআরসি নিয়ে। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি মোটেই এনআরসি নিয়ে চিন্তিত নই। নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।’ তাকে পাল্টা প্রশ্ন হয়, আপনি কি প্রধানমন্ত্রী মোদির জবাবে সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেসে বলেন, ‘নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট। ভারতের প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। আমি কেন কিছু ভাবব।’ প্রধানমন্ত্রী মোদির আশ্বাসের পরও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় গিয়ে বলেছিলেন, ‘সারা দেশে এনআরসি হবে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বেছে বেছে দেশ থেকে তাড়াব।’ কিন্তু অমিত শাহ যা-ই বলুন, মোদির কথার ওপরই আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনারা তো ভারত থেকে পিয়াজ পাচ্ছেন না। তাহলে কী করবেন। হেসে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি তো বলেই দিয়েছি পিয়াজ ছাড়া রান্না করার জন্য। পিয়াজ খাচ্ছি না তত দিন, যত দিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’

তাকে ফের প্রশ্ন করা হয়, পশ্চিমবঙ্গকে ইলিশ দিলেন। এরপর কি নিয়মিত দেবেন? জবাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ওখানে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছে। তাই ভেবে দেখব স্থায়ী রপ্তানি করা যায় কি না।’ এ সময় তার পাশে দাঁড়ানো পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলে, ‘আপনারা মমতা ব্যানার্জিকে তিস্তার পানি দিতে বলুন।’

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রশ্ন করা হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তো নাম পরিবর্তন করে প্রদেশের নাম বাংলা করতে চাইছে। আপনার কী মতামত? এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা বাংলায় তো আমরা থাকি। আবার কেন অন্য বাংলা?’ এ কথার মাধ্যমে তিনি মমতার প্রস্তাব খারিজ করে দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার এবারের সফর মূলত আর্থিক বিষয়কেন্দ্রিক। আশা করছি একটা ইতিবাচক ফল হবে। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব যে পর্যায়ে, তাতে এ সম্পর্ক আরও উন্নত হবে বলে আশা করছি।’

তাকে মনে করিয়ে দিই যে নির্বাচনের আগে আপনার বাড়িতে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। দেখলাম তিনি সবই মনে রেখেছেন। অভিনন্দন জানালাম নির্বাচনে জয় এবং তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর