শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভারতে ব্যবসায়ী ফোরামের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন সুসম্পর্ক কাজে লাগান

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন সুসম্পর্ক কাজে লাগান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নয়াদিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশ ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন -পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত এখন সর্বকালের সেরা সম্পর্ক উপভোগ করছে। তিনি বলেন, উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করে এ অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার দিল্লিতে আইটিসি মৌর্য কামাল মহাল হলে ভারত-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের (আইবিবিএফ) ইকোনমিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লিতে গতকাল দুটি গভর্নমেন্ট টু বিজনেস সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।  একটি স্মারকে সই করেছে স্টার্ট আপ বাংলাদেশ ও টেক মাহিন্দ্র। অন্য স্মারকটিতে সই করে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি ও আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেডস। সম্মেলনে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে প্ল্যাটফর্মটির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে এবং আমাদের জনগণের পারস্পরিক বৃহত্তর স্বার্থে উভয় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশ ও এ অঞ্চলকে আরও সমৃদ্ধ এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন ভারতের বাণিজ্য, শিল্প ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ভারতের কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) সভাপতি বিক্রম শ্রীকান্ত কিরলসকার, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি সন্দীপ সোমনি, অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়ার সভাপতি বালকৃষ্ণ গোয়েঙ্কা প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী ভারতের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্ক প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। মোংলা, ভেড়ামারা ও মিরসরাইয়ে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তিনটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই তিনটি ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আমাদের রপ্তানিযোগ্য খাতকে আরও প্রশস্ত করতে সহায়তা করবে।’ ‘আমরা সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি, যার মধ্যে প্রায় ১২টি তৈরি হয়েছে, যেখানে ৪টি অঞ্চল ৩টি দেশের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে’, যোগ করেন তিনি।

এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশের গড়ে ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কৌশলগত ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে এ অঞ্চলের অর্থনীতির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। পশ্চিমে ভারত, উত্তর দিকে চীন এবং পূর্বদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বাংলাদেশ ৪ বিলিয়ন মানুষের বাজারের মাঝামাঝি রয়েছে। বৈশ্বিক সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবৃদ্ধির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে বৈশ্বিক এফডিআইর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থারই প্রতিফলন।’

সংসদের প্রাসঙ্গিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে আরও বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ দেখতে চাই যেখানে ভারতীয় বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করতে এবং আমাদের মধ্যে বিদ্যমান উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলো এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা জানি, বিশ্বের বেশির ভাগ বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির দেশগুলো তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেই তাদের প্রাথমিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রকল্প গ্রহণ করেছে।’

একইভাবে ভারতীয় ব্যবসায়ী নেতারা আমাদের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে আরও এগিয়ে নিতে খুব বড় ভূমিকা পালন করেতে পারেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বা ‘সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে সক্ষম হব এবং এভাবেই আমরা আমাদের শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে ভারতীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে দেশে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতি বলবৎ থাকার বিষয়টি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে উদার বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে- বৈদেশিক বিনিয়োগের আইনি সুরক্ষা, উদার রাজস্ব ব্যবস্থা, মেশিনপত্র আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়, আনরেসট্রিকটেড এক্সিট পলিসি, সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ও পুঁজি নিয়ে চলে যাওয়ার সুবিধাসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সংসদের প্রাসঙ্গিক আইন এবং দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির দ্বারা ও বিদেশি বিনিয়োগকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বিশাল জনসংখ্যা, যাদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ বছরের কম, যারা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে নিযুক্ত হতে প্রস্তুত রয়েছেসহ বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘দ্রুত নগরায়ণের ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করে।’ সন্ত্রাস এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যা সমন্বিত একটি প্রগতিশীল ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।’ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্যের ভারসাম্য যদিও এখন পর্যন্ত ভারতের পক্ষে রয়েছে।’ শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। মোদিজি নিজে যাকে ‘সোনালি অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা দৃঢ় আস্থাশীল যে, ‘আগামী বছরগুলোতে আমরা এ সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার সম্পর্ক শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে। ১৯৭১-এর চেতনা সব সময় আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সরকার এবং দেশটির জনগণের কাছ থেকে যে সমর্থন ও সহযোগিতা বাংলাদেশ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তা স্মরণ করেন। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত এক দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নে সক্ষম হয়েছি, যা উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুশাসন, অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জোরদার সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির সুবাদে। তিনি বলেন, এসব অর্জন বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলায়’ রূপান্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে সাফল্য এনে দিয়েছে। যদি এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে, যদি আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারি, আমরা আশা করি, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব হবে।

তিনি দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।

ভারত পিয়াজ রপ্তানি হঠাৎ বন্ধ করায় আমাদের অসুবিধা : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পিয়াজ রপ্তানি ভারত হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় তার দেশবাসীর অসুবিধা হচ্ছে। তিনি শুক্রবার সকালে দিল্লিতে মৌর্য শেরাটন হোটেলে ভারত-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত ইকোনোমিক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। অনুষ্ঠানে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লিখিত ভাষণ থেকে সরে গিয়ে শেখ হাসিনা হিন্দিতে বলেন, ‘হঠাৎ করে আপনারা বাংলাদেশে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে নোটিস দিলে আমরা অন্য দেশ থেকে ব্যবস্থা করতে পারতাম। ভবিষ্যতে এমন কিছু করার আগে জানালে ভালো হয়।’ বাংলাদেশ নেত্রীর মুখে হিন্দি শুনে মিলনায়তনের সব শ্রোতা তুমুল করতালি দিতে থাকেন। শেখ হাসিনা রসিকতার সুরে বলেন. তিনি তাঁর রাঁধুনিকে রান্নায় পিয়াজ ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন তো পিয়াজ ছাড়াই রান্না খাচ্ছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাণিজ্যমন্ত্রী পিযূষ গয়াল যখন ভাষণ দেন তখন তিনি সহাস্যে বলেন, আমরা সব সময় বাংলাদেশের পাশেই আছি। তিনি জানান, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে দুটি সীমান্ত হাট চালু হয়েছে। একই সঙ্গে ভারত যে আট বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে সেই অর্থ থেকে আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগসহ নদীপথ ড্রেজিং, ভারত-বাংলাদেশ ডিজেল পাইপ লাইন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, সংস্কৃতি, নগর উন্নয়ন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। পীযূষ গয়াল একই সঙ্গে ভারতের শিল্প ও রেলমন্ত্রীও। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত এখন সবচেয়ে দৃঢ় সম্পর্ক উপভোগ করছে। তিনি সুসম্পর্কের এই সুবিধা গ্রহণ করে দুই দেশের মানুষের উন্নতির জন্য অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য খাতকে আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ ও সৌহার্দ্যরে জন্য ৪ দফা প্রস্তাব : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দিল্লিতে হোটেল তাজ প্যালেসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটের সমাপনী অধিবেশনে বক্তৃতাকালে দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক কর্মকা  পরিচালনায় ৪ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া সংঘবদ্ধ, বন্ধত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক অঞ্চল হিসেবে পারস্পরিক বৈশ্বিক কল্যাণে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। ডব্লিউইএফ সভাপতি বোর্জে ব্রেন্ডের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট ছিলেন সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট, সেকুইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং, এ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী সহ-সভাপতি শোবানা কারমিনেনি ও বুকিং ডটকম-এর চেয়ারওমেন জিলিয়ান টানস। সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সংযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবনায় বলেন, প্রথমত আমাদের সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যুগ যুগ ধরে বহুত্ববাদ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি। এর মাধ্যমে আমরা ধর্ম, জাতি ও ভাষাগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যের উদযাপন করতে পারি। এটি হচ্ছে মৌলিক বিষয়। দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধির সময়ে সমাজে যেন বৈষম্য আরও বেড়ে না যায় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক এবং তা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত সম্প্রদায় বা দেশ পেছনে পড়ে থাকবে না। আমাদের যুবকদের আকাক্সক্ষা ও চাহিদা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।

তৃতীয় প্রস্তাবে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অন্যদের হাত ধরতে হবে। সম্প্রদায় ও দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা হচ্ছে চাবিকাঠি। আমাদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।

চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের জনগণের স্বার্থে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক বাস্তবতার আমরা প্রশংসা করব। আমরা স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বন্ধ করে দিতে পারি না।’

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দেখা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে দেশ স্বাধীন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।

সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্যবিমোচন ও সহযোগিতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একযোগে কাজ করতে শেখ হাসিনার ধারণার প্রশংসা করেন।

সর্বশেষ খবর