শিরোনাম
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কুষ্টিয়ায় দাফন জানাজায় লাখো মানুষের ঢল

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তৃতীয় জানাজা শেষে কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে আবরার ফাহাদের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজায় রাজনৈতিক নেতারাসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকার লাখো মানুষ অংশ নেয়।

এর আগে সকাল সাড়ে ৬টায় আল-হেরা জামে মসজিদের পাশে পিটিআই রোডে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ দলীয় নেতা-কর্মী অংশ নেন। জানাজায় খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ ইসলাম অমিত ও জয়ন্ত কুমার কু ু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু অংশ নেন। তৃতীয় জানাজার সময় ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ তার ছেলের জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাসহ তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং আগামী শুক্রবার বাদ জুমা ফাহাদের কুলখানিতে সবাইকে অংশ নেওয়ার অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে এমন নৃশংস হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। জানাজায় অংশগ্রহণকারী মানুষ সমস্বরে প্রতিবাদের কণ্ঠ মেলান ফাহাদের বাবার সঙ্গে। পরে দাফন শেষে কবর জিয়ারত করেই ফাহাদের বাবা রবকত উল্লাহ অসুস্থ বোধ করেন। এদিকে মা রোকেয়া বেগম দুই দিনের শোক আহাজারিতে বাকরুদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফাহাদের জানাজা শেষে মুহূর্তের মধ্যে শোকার্ত মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। রাস্তা অবরুদ্ধ করে শুরু করে মানববন্ধন। তাদের এক দাবি ফাহাদের মতো এমন করুণ পরিণতি রুখতে এই হত্যায় জড়িতদের মৃত্যুদ ই হবে একমাত্র বিচার। প্রতিবাদী মানুষের মুহুর্মুহু স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে গোটা এলাকা। শেখ হাসিনার বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই, ফাহাদ ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই, ফাহাদের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই। এরকম নানা স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চারদিক। দাফন শেষে ফাহাদের স্কুলের সহপাঠী আতিক বলেন, আমরা একই সঙ্গে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করি। ওর অদম্য মেধাই ওকে আমাদের থেকে আলাদা করে ফেলে। এখন চিরতরে ফাহাদ পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে গেল। যাদের কারণে ফাহাদ আমাদের সবাইকে ছেড়ে আলাদা হয়ে গেল তারাও যেন একইভাবে পৃথিবী থেকে আলাদা করার দাবি করছি। আরেক বন্ধু কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সোহরাব হোসেন বলেন, স্কুলে দুজনই বসতাম ফার্স্ট বেঞ্চে। আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল ও। এসএসসিতে দুজনেই ভালো রেজাল্ট করলাম। অর্থের অভাবে আমি বাইরে যেতে পারিনি। ফাহাদ গেছে। ও ঠিকই ওর জায়গা করে নিয়েছে ওর মেধা আর ভালো গুণ দিয়ে।

এখন দেখছি ওটাই হলো ওর জীবনে কাল। ফাহাদের ফুফু আকলিমা খাতুন বলেন, এমন সোনার টুকরা ছেলেটা যেদিন বাড়ি থেকে গেল সেদিনই ঘাতকরা মায়ের বুক খালি করল। বুয়েটের মতো জাগায় যদি এমন ঘটনা হয় তাহলে কীভাবে আর কোন মা-বাবা সন্তানদের পড়তে পাঠাবে। এ ঘটনা তো সব বাবা-মাকে আতঙ্ক সৃষ্টি করে দিল। এর আগে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মরদেহবাহী গাড়িটি শহরের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ সড়কের (পিটিআই রোডের) নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। তখন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশের অপেক্ষারত স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ জানান, এইচএসসিতে দেশের টপ-২০-এর মধ্যে ছিল আবরার। সে পড়ালেখা ছাড়া কিছু বুঝত না। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না। এদিকে, দুপুর ১২টায় শহরে প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি। এতে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মানবাধিকার সমিতি জেলা শাখার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস, সহসভাপতি অর্পণ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক শাহারিয়া ইমন প্রমুখ। মানববন্ধনে ফাহাদ হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করা হয়। উল্লেখ্য, বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রবিবার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর