শনিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আনিস বহিষ্কার যুবলীগ থেকে

চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত দলীয় সভানেত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়ন থেকে দফতর সম্পাদক পদে উন্নীত কোটিপতি বনে যাওয়া ‘বিস্ময় যুবক’ কাজী আনিসকে যুবলীগ বহিষ্কার করেছে। সংগঠনের পরিচয়ে অর্থ তছরুপ ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অপরাধে তাকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দেবে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। গতকাল দুপুুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে। সংগঠনের সার্বিক পরিস্থিতি ও সপ্তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন না।  চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে তোপের মুখে পড়েন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন।   

সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শহীদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, আবদুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমান, বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, নিখিল গুহ, শাহজাহান ভুইয়া মাখন, মোখলেছুজ্জামান হিরু, শেখ আতিয়ার রহমান দিপু।  

বৈঠক শেষে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বলেন, দফতর সম্পাদক কাজী আনিসকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন কংগ্রেস নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলো লিখিত আকারে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

সূত্রমতে, বৈঠকে চেয়ারম্যান এলেন না, তাই প্রেসিডিয়াম সদস্যরা তার তীব্র সমালোচনা করেন। আতাউর রহমান আতা ও মাহবুবুর রহমান হিরণ, মো. ফারুক হোসেন অভিন্ন সুরে বলেন, উনি (চেয়ারম্যান) কী কারণে বৈঠকে আসতে পারেননি, সে বিষয়টি আমাদের পরিষ্কার করেননি। তার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আগামীতে কোনো মিটিংয়ে থাকতে পারবেন কিনা তাও সন্দেহ। আসন্ন কংগ্রেসে উপস্থিত হতে না পারলে কে সভাপতিত্ব করবেন? আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ব্যক্তির দায় সংগঠন বহন করতে পারে না। তার নামে নানা ধরনের সংবাদ সংগঠনের সুনাম ক্ষুণœ করে। ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ সময় আলতাফ হোসেন বাচ্চু বলেন, যেহেতু উনি নেই, তাই আমাদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের চেয়ারম্যান তো এখনো বহাল। তার বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পারি। এতে সংগঠনের শৃঙ্খলাও বজায় থাকবে। 

এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরণ বলেন, আনিসের মাধ্যমে টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা স্থান পেয়েছে। সঠিক লোক আসেনি দায়িত্বে। এ ব্যাপারে আপনি (হারুন) নীরব থেকেছেন। আপনি কোথায়ও না বললেও নেত্রীর কাছে গিয়ে বলতে পারতেন। সে সুযোগ আপনার ছিল। কিন্তু আপনি তা করেননি। হারুনুর রশিদ এসব অভিযোগের জবাবে কোনো কথা বলেননি। অনেক প্রেসিডিয়াম সদস্যই হারুনুর রশিদকে দোষারোপ করেন। আবার কেউ কেউ বলেন, চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে এখন অনেকেই অনেক কথা বলছেন। অথচ এই চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেশের বাইরে কিংবা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে তো আয়েশি জীবন-যাপন করেছেন। এখন তার অনুপস্থিতিতে এমন সমালোচনা সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষু্ণ্ন করবে।

রাজধানীতে যুবলীগের নেতাদের চালিত ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযান শুরু হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সরব হয় সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। অভিযোগ আসার পরেই পিয়ন থেকে দফতর সম্পাদক হওয়া কাজী আনিস আত্মগোপনে চলে যান। অন্যদিকে ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে প্রকাশ্য আসছেন না যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। যোগ দিচ্ছেন না সাংগঠনিক কোনো কর্মকাে । তবে গত ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে তাকে গণভবনে দেখা গেছে। এর পর থেকেই তিনি বাহিরে তেমন আসেন না। সূত্র জানায়, তিনি তার ধানমন্ডির বাসভবনেই আছেন। বৈঠক শেষে জানতে চাইলে শেখ আতিয়ার রহমান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যানের অনুমতি এবং নির্দেশেই এই সভা হয়েছে। তবে তিনি কেন আসেননি জানা নেই। হয়তো অসুস্থতাবশত আসেননি। দিপু বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আর যাদের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়েও তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের সভাপতিত্ব কে করবেন জানতে চাইলে অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, এর দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আজ সাধারণ সম্পাদক সভাপতিত্ব করেছেন। চেয়ারম্যান একটি বড় পদ এর জন্য সাংগঠনিক নেত্রী যে সিদ্ধান্ত  দেবেন আমরা তাই করব।

সর্বশেষ খবর