রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বুয়েটে হলে হলে তল্লাশি

বুয়েট ছাত্রলীগের অফিস ও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ সিলগালা, ঢাকার বাইরেও অভিযান

আকতারুজ্জামান ও নাসিমুল হুদা

বুয়েটে হলে হলে তল্লাশি

বুয়েটের ছাত্ররা গতকালও ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সিলগালা করে দেওয়া কক্ষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার এক দিন পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের ছাত্রহলে তল্লাশি ও অভিযান চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযানে বুয়েট ছাত্রলীগের অফিস কক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আবাসিক কক্ষ সিলগালা করা হয়েছে। এ অভিযান ও তল্লাশি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে  বিভিন্ন হলে অবৈধ অবস্থান ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের কক্ষ সিলগালা করা হবে। তবে শুধু বুয়েটে নয়, এ ধরনের অভিযান শুরু হয়েছে দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গতকাল সকালে অভিযান শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি জামিউস সানির আহসান উল্লাহ হলের ৩২১ নম্বর কক্ষ এবং সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের শেরেবাংলা হলের ৩০১২ নম্বর কক্ষ সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। আহসান উল্লাহ হলের ১২১ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের অফিসও সিলগালা করা হয়। পরে মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হলে অবৈধ ছাত্রদের কক্ষ সিলগালা করা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন কয়েকটি হলের চারটি কক্ষ সিলগালা করা হয়। হলে ছাত্রত্বের বৈধতা না থাকায় তাদের কক্ষগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে এবং বাকি কক্ষগুলো হল প্রভোস্টের নেতৃত্বে সিলগালা করে দেওয়া হবে।

এর আগে বুয়েটের হলগুলো থেকে সিটের দখলদারি উচ্ছেদ ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস সিলগালা করার নির্দেশনা জারি করে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইদুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেন। এতে বলা হয়, অবৈধভাবে যারা হলের সিট দখল করে আছে, তাদের সিট খালি করতে এবং রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস কক্ষ বন্ধ করে তা সিলগালা করার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ব্যবস্থা নেবেন। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে কেউ সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র‌্যাগিং বা ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। র‌্যাগের নামে ছাত্রদের নির্যাতনের ঘটনা-সংক্রান্ত অভিযোগ জমাদান ও প্রকাশের জন্য ওয়েব বেজড পোর্টাল তৈরি করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনলাইনেই ছাত্ররা তাদের অভিযোগ জমা দিতে পারবেন এর মাধ্যমে। এসব অভিযোগ পর্যবেক্ষণ করে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে ব্যবস্থা থাকবে দ্রুত বিচারের। এ ছাড়া গতকালই বিভিন্ন আবাসিক হলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আবাসিক হলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র তড়িৎকৌশল বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের আবরার ফাহাদকে গত রবিবার রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ১০ দফা দাবিতে পরদিন সোমবার থেকে বিক্ষোভ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ ও ক্ষতিপূরণ বুয়েট থেকে বহন করা, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্বল্পতম সময়ে মামলা নিষ্পত্তি, অবিলম্বে অভিযোগপত্র প্রকাশ, বিভিন্ন সময় নির্যাতনে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল এবং বুয়েটে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি রয়েছে এই ১০ দফার মধ্যে। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীরা আলটিমেটাম দিলে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। উপাচার্য শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও ছাত্র-ছাত্রীরা ১০ দাবির মধ্যে পাঁচ দাবি পূরণে আন্দোলন চলমান রেখেছিলেন। গতকাল তারা ষষ্ঠ দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে অভিযান : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, দুটি হলের তিনটি কক্ষে অভিযান চালিয়েছে হল প্রশাসন। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালান প্রভোস্ট। এর আগে ‘টর্চার সেল’ সন্দেহে আমীর আলী হলের ১৪৫ ও ২৫৮ নম্বর কক্ষেও অভিযান চালান প্রভোস্ট। তবে ওই তিন কক্ষে অভিযান চালিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন দুই হলের প্রভোস্টরা। টর্চার সেল পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে যদি কোনো ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে কক্ষে ডাকা হয়, তাহলে হল প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ক্ষেত্রে ০১৭১৫২৯৯৩৯৩, ০১৯১৭৪০১০৪১, ০১৭১০৩৮০৭৪৯ এই তিনটি সেলফোন নম্বরে হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

হল পরিদর্শনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বুয়েটছাত্র আবরার হত্যার পর নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল প্রাধ্যক্ষ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য, নতুন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার। যদিও তিনি এটিকে অভিযান বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো অভিযান নয়। ভবিষ্যতে যেন শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকে সেজন্য আমরা তাদের দেখতে এসেছি।’ এদিকে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে ড. শিরীন আখতার বলেন, ‘ওরা (শিক্ষার্থীরা) খুব ভালো আছে। এখানে খারাপ কিছু নেই। টর্চার সেলও নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধা, তারা কেমন আছে এগুলো দেখতে এসেছি। হলগুলো পরিদর্শনের কারণে সব জায়গায় গুণগত পরিবর্তন আসবে।’

কুমিল্লায় ভিক্টোরিয়ার হলের বহিরাগতদের চলে যাওয়ার নির্দেশ : কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রদের আবাসিক হল কবি নজরুল ইসলামে যে কোনো মুহূর্তেই পুলিশ চিরুনি অভিযান চালাতে পারে। তাই বহিরাগতদের চলে যাওয়া এবং বৈধ শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক পরিচয়পত্র রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কবি নজরুল ইসলাম হল কর্তৃপক্ষ। গতকাল এই নোটিস দেওয়া হয়। প্রভোস্ট মশিউর রহমান বলেন, ‘কবি নজরুল ইসলাম হলে কোনো টর্চার সেল নেই। আমরা বলতে চেয়েছি, যদি কোনো বহিরাগত থাকে, তাহলে যেন চলে যায়। আমাদের জানা মতে কোনো বহিরাগত নেই। হলের পরিবেশ যেন সুন্দর থাকে এজন্যই এমন নির্দেশ দিয়েছি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর