রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দাবি মানার পরও আন্দোলনের যৌক্তিকতা কী : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবি মানার পরও আন্দোলনের যৌক্তিকতা কী : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পায়রা উড়িয়ে মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আবরার হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের মুখে বুয়েট কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সাধারণ ছাত্রদের ১০ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন ভিসি, তারপরেও তারা কেন আন্দোলন করবে, আন্দোলনের কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে।’ শিক্ষাঙ্গনের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, অন্যায়কারী যে কারও বিরুদ্ধেই কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, আমাদের কথা স্পষ্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ রাখতে হবে। কোনো অন্যায়-অবিচার আমরা সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। অপরাধী যে-ই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। গতকাল সকালে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিল-২০১৯-এর উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিকে খুনি হিসেবেই তার সরকার দেখে। আবরারের হত্যাকান্ডে র খবরটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। এক মিনিটও দেরি করিনি। এ ধরনের অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না।  আমরা কিন্তু পিছিয়ে থাকিনি। অপরাধীরা কোন দল করে তা দেখিনি। খুনিকে খুনি হিসেবে, অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে, অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী হিসেবেই দেখেছি। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি কারও আন্দোলন বা নির্দেশের অপেক্ষা করিনি। আমি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি- ওদের (আবরারের হত্যাকারী) গ্রেফতার কর এবং ভিডিও ফুটেজ থেকে সব তথ্য সংগ্রহ কর। কিন্তু এ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে সাধারণ তদন্তে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের সময় তারা (আন্দোলনকারী) কেন বাধা দিয়েছিল আমি জানি না। পুলিশের আইজিপি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানোর পর ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী ভিডিও ফুটেজের কপি সরবরাহ করে দ্রুত আসামি চিহ্নিত করার কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনাও তিনি প্রদান করেন বলে জানান। তিনি জানান, সেখানে ফুটেজ আনতে পুলিশকে বাধা প্রদান না করলে আরও আগেই অপরাধী চিহ্নিত করা যেত,  তখন অনেকেই পালাতে সময় পেত না। আবার যারা খুনের সঙ্গে জড়িত তারাই এই বাধার সৃষ্টি করেছে কিনা সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকক্ষণ ফুটেজ সংগ্রহ করতে আসা পুলিশদের আটকে রাখা হয়। আর এর মাধ্যমে আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে কিনা তা আন্দোলনকারীরা বলতে পারবে। তিনি আরও বলেন, জিয়া, খালেদা জিয়া এবং এরশাদের আমলে একের পর এক ছাত্র হত্যার ঘটনা ঘটলেও একটিরও বিচার হয়নি। কেবল আওয়ামী লীগই বিচার করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বুয়েটে ছাত্রদলের টগর ও মুকী গ্রুপের সংঘর্ষে সাবেকুন্নাহার সনি নিহত হলো, তখন কে প্রতিবাদ করেছে। বুয়েটের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন তারাও নামেনি। তাদেরও এ জন্য প্রতিবাদ করতে দেখিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবার কথা বলার অধিকার আছে। শেখ হাসিনা বলেন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর সমগ্র বিশ্বে যে মর্যাদা বাংলাদেশ পেয়েছিল গত ১০ বছরের সে সম্মান আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমাজকে পাল্টে ফেলে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আর সুযোগ পেলে আমাদের নারীরা যে তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারে তা আজ প্রমাণিত।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া সাম্প্রতিক চুক্তির প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে এর সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, অতীতের জিয়া, খালেদা এবং এরশাদ সরকার মুখে সমালোচনা আর তলে তলে অতি ভারত তোষণ নীতি চালিয়ে গেছে। ভারতের থেকে যদি কেউ ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারে তবে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। তিনি বলেন, লাভ-ক্ষতির হিসাব করলে এখানে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি। কাজেই মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য জেনেশুনেই জ্ঞানপাপীরা কথা বলে যাচ্ছেন। ত্রিপুরার সঙ্গে ফেনী নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের ওই অংশের মানুষের পান করার পানির অভাব। এ ছাড়া বর্ডারের পানিতে দুই দেশেরই সমান অধিকার। আর এখানে তো পুরাটাই সীমান্ত। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা আমাদের সাহায্য করেছিল। আশ্রয় দিয়েছিল। এটা তো ভুলে যেতে পারি না। ভারতে এলপিজি রপ্তানি বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমদানি করে আনা এবং দেশে উৎপাদিত কিছু এলপিজি বোতলজাত করে রপ্তানি করব। আর দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য অনেক কোম্পানি কাজ করছে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, নতুন নেতা নির্বাচনের মধ্য দিয়েই একটি সম্মেলন সফল হয়। মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।

দলের সাধারণ সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার ভূঁইয়া এমপি সংগঠনের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। দলের কার্যকরী সভাপতি এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুরাইয়া আক্তার স্বাগত বক্তৃতা দেন এবং দলের সহ- সভাপতি সুলতানা আনোয়ার শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ, জাতীয় শ্রমিক লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মহিলা শ্রমিক লীগের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে মহিলা লীগের কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর মহিলা শ্রমিক লীগের সভাপতি রওশন জাহান সাথী দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের সব শহীদ এবং গণআন্দোলনে নিহত আওয়ামী লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগসহ সব সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২৯ মার্চ বাংলাদেশ মহিলা শ্রমিক লীগ আত্মপ্রকাশ করে এবং গতকাল সংগঠনটির দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সুরাইয়া সভাপতি, সাথী সাধারণ সম্পাদক :  দীর্ঘ এক দশক পর মহিলা শ্রমিক লীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। আর নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে সুরাইয়া আক্তার এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজী রহিমা আক্তার সাথীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে উপস্থিত সারা দেশের কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসস্মতিক্রমে এ কমিটি গঠিত হয়। দুই বছর মেয়াদি কমিটিতে মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক কার্যকরী সভাপতি সুরাইয়া আক্তার সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুন্নাহার ভূঁইয়া কার্যকরী সভাপতি এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী রহিমা আক্তার সাথী সাধারণ সম্পাদক  হয়েছেন। সম্মেলনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটির নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে ৪৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। সর্বশেষ ২০০৯ সালে মহিলা শ্রমিক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বশেষ খবর