রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দেশ এগোচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে

বিশেষ সংবাদদাতা

দেশ এগোচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে

আবুল কালাম আজাদ

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ-কারিগরি সহায়তা না পেয়েও কীভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ- এক সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসডিজি বিষয়ক প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, বিশ্ব উন্নয়ন এজেন্ডা হচ্ছে ‘এসডিজি-২০৩০’। বিশ্বের উন্নয়নে সম্মিলিত একটি প্রয়াস, যা গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। এটি বাস্তবায়নে প্রতিটি দেশেরই বিপুল পরিমাণ রিসোর্স লাগবে। আমরা বাংলাদেশে যে কাজ করেছি বা করছি, তা হিসাব কষে দেখেছি যে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন হবে ৯২৮ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রতি বছর লাগছে ৬৬ বিলিয়ন ডলার করে, যা বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। কিন্তু এই পরিমাণের অর্থ আপনাকে কে দেবে? বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, অন্য কোনো দেশ? প্রত্যেকেরই তো টাকার প্রয়োজন। যাদের মনে করি সম্পদে পরিপূর্ণ দেশ, অর্থ-সম্পদ প্রচুর রয়েছে, তারা এ কাজে যে অর্থ প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগেও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের দেওয়ার কথা ০.৭% অর্থ, তারা তা দেয়নি। এখনো প্রতিটি কনফারেন্সেই এসব কথা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক যে রিসোর্স, এতে সেভাবে হচ্ছে না। তারপরও বাংলাদেশ কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরাই প্রথম ক্লাইমেট ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি নিজেদের তহবিল দিয়ে। এ অবস্থায় আমরা নিজেরাই চেষ্টা করছি অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের। ইতিমধ্যেই আমরা সমগ্র জনগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করতে সক্ষম হয়েছি পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে। উন্নয়নে সমগ্র জনগোষ্ঠীকে উজ্জীবিত করার এ প্রয়াসের পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যার।

তিনি বলেন, আমরা হিসাব কষছি যে, পাবলিক সেক্টরে কত টাকা, প্রাইভেট সেক্টরে কত টাকা, পিপিপিতে কী আসবে। আমাদের এনজিওগুলো কত টাকা আনতে পারবে। সব রিসোর্স আমরা ভাগ করেছি। সব সেক্টরে চেষ্টা করছি অর্থগুলো মোবিলাইজ করার জন্য। ইনোভেটিভ ফাইন্যান্সিং কিন্তু লাগবে। কারণ, কেউ তো টাকা এমনিতে দেবে না। এ জন্য আমরা যৌথ বিনিয়োগের চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ১০০টি ইকোনমিক জোন স্থাপনের। হাইটেক পার্ক হবে ২৮টি। এসবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ আসবে। আপনারা জানেন, বিশ্ববাজারে চলমান অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, সেখানে পৃথিবীর বড় দেশগুলোর মধ্যে যে বিরোধ, তার কারণেও অনেক ব্যবসা তাদের নিজেদের মধ্যে থাকবে না। তা আমাদের মতো দেশে যাবে। সে তাগিদেই ইকোনমিক জোনগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমিও বিশ্বাস করি, এসবে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ ঘটবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে স্কিল ডেভেলপমেন্ট অফিস। উদ্দেশ্য, ১০০টি ইকোনমিক জোনে যেমন আমাদের দক্ষ লোক লাগবে, সারা বিশ্বেই দক্ষ লোকের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। সার্ভিস সেক্টরে প্রচুর লোকের প্রয়োজন হবে। আমরা যদি চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়তে পারি এবং সরবরাহ করতে পারি, তাহলে তাদের জন্য যেমন কর্মসংস্থান সহজ হবে, অপরদিকে রেমিট্যান্সও বাড়বে। কম মজুরিতে তারা যদি মাসে ৫০০ ডলার পাঠাতেন, সে স্থলে অধিক মজুরি পেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়বে। এভাবেই আমাদের রপ্তানিও বাড়বে। আর এভাবেই সামগ্রিক আয় বাড়বে বাংলাদেশের। তিনি বলেন, বলার অপেক্ষা রাখে না বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় সৃষ্টি করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্ব। আজাদ উল্লেখ করেন, বিশ্বে বাংলাদেশ একমাত্র রাষ্ট্র যারা শত বছরের কর্মপরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান) নিয়ে এগোচ্ছে। ২০২১-এ কী করা হবে, ২০৩০-এ এসডিজি অর্জন, ২০৪১-এ উন্নত বিশ্বে অন্তর্ভুক্ত, ২০৭১-এ বাংলাদেশের শত বছর পূর্তিতে কী হবে এবং সবশেষে ২১০০ সালে কী ধরনের বাংলাদেশ দেখব। এসব কর্মপরিকল্পনা সামনে নিয়েই আমরা এগোচ্ছি ধাপে ধাপে। আর এ জন্য রয়েছে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, যার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে দেশবাসীর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা আজ বাস্তবায়নের পথে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার বিচক্ষণতাপূর্ণ নেতৃত্বে। গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের চিত্র উপস্থাপনকালে আজাদ বলেন, গত ঈদের আগে একটি ইউনিয়নে ২৫০০ ফ্রিজ ক্রয়ের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশে মোট ইউনিয়নের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। তিনি জানান, বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এখন শুধুই কথার কথা। কারণ, প্রতিটি আমলাকেই সামনের বছরে তারা কী করবেন তার একটি অঙ্গীকার করতে হচ্ছে। এটি সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি সব পর্যায়েই করতে হচ্ছে। ফলে কোনো কিছুই থেমে থাকার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ আমলের ধ্যান-ধারণাও বিদ্যমান নেই অফিস-আদালতে। আমলারাও এখন সরাসরি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, মতবিনিময় করেন এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এভাবেই প্রশাসনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটছে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহে। আজাদ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, প্রবাসের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ‘পাই’ নামক একটি কর্মকান্ডে  প্রবাসের সেবামূলক মনোভাব (ফিলনথ্রপি), বিনিয়োগের আগ্রহ (ইনভেস্টমেন্ট) এবং প্রবাসীদের অভিজ্ঞতাকে (এক্সপার্টিজ) বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এনআরবি ইঞ্জিনিয়ার এবং চিকিৎসকদের সম্মেলন হয়েছে ঢাকায়। সেখানে তারা নিজ নিজ আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। বেশকটি প্রকল্প-পরিকল্পনাও উপস্থাপন করা হয়েছে। এভাবেই বাংলাদেশের অগ্রগতিতে প্রবাসীদের সম্পৃক্ততা ঘটানোর পরিক্রমা চলছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে তার কার্যালয়ে সৃষ্ট সমন্বয়কারীর অফিসের প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশের উন্নয়নের অভিযাত্রা উপস্থাপনের জন্য। তার পরের সপ্তাহে জাতিসংঘে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে। সে সময়েই বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয় এই সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকারে তিনি ধারাবিবরণী দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রশাসন ও রাজনীতিতে টিমওয়ার্কের। পরস্পরের সহযোগী হয়ে কাজের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের অনেক আগেই উন্নত দেশের তালিকায় যাবে বাংলাদেশ, এ আশাও পোষণ করেন দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি।

সর্বশেষ খবর