সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঐক্যফ্রন্টের র‌্যালিতে পুলিশের বাধা

কণ্ঠ কেউ স্তব্ধ করতে পারেনি : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চেয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নাগরিক শোক র‌্যালিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শোকর‌্যালি নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রেস ক্লাবের সামনেই ব্যারিকেড দিয়ে র‌্যালিটি আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জেএসডির প্রেসিডিয়াম সদস্য তানিয়া রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ প্রমুখ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের কিছুটা কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। র‌্যালিতে পুলিশি বাধার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক বক্তব্য দেন আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, এই সরকার গণবিরোধী সরকার। জনগণকে দেখলেই তারা ভয় পায়। সরকার ভীত হয়ে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। এ সময় র‌্যালি করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে পুনরায় আগামী ২২ অক্টোবর শোকর‌্যালি ও প্রতিবাদ সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

মানুষের কণ্ঠকে কেউ স্তব্ধ করতে পারেনি : এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চাই’ আলোচনা সভায় বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেন সরকারে উদ্দেশ্যে বলেন, সময় থাকতে মাথা ঠা া করুন। মনে করবেন না, কিছু পুলিশ, কিছু বন্দুক দিয়ে এই দেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবেন। আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করার কোনো ক্ষমতা নেই আপনাদের, পারবেনও না। ১৬ কোটি মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ কেউ করতে পারেনি। আপনিও পারবেন না। সময় থাকতে মাথা ঠা া করে কুশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করুন। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। তিনি আরও বলেন, আমি ক্ষমতা চাচ্ছি না। এই মঞ্চের কেউ-ই চাচ্ছে না। ১৬ কোটি মানুষের কাছে মালিকানা ছেড়ে দিন। কুশাসন থেকে মানুষ মুক্ত হোক। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হোক। সরে দাঁড়ান। সরতেই হবে। দেশের প্রতিদিন যে ক্ষতি হচ্ছে, সেই ক্ষতি থেকে বাঁচতে সরে দাঁড়াতেই হবে। গণফোরাম সভাপতি আরও বলেন, যথেষ্ট হয়েছে। আর কত? তৃতীয়বার? তৃতীয়বার কে আপনাদের নির্বাচিত করেছে? আমরা তো দেখেছি, ২৯ তারিখ রাতের পর ৩০ তারিখ সকালে এসে ‘আমি নির্বাচিত হয়ে গেছি, আগামী পাঁচ বছরের জন্য আমি হয়ে গেছি। এই নাটক দেখেছি।’

আবরার হত্যাকা  প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, সন্ত্রাসকে আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। আবরার কী অন্যায় করেছিল? আবরারের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে, সেটা সংবিধানের ওপর আঘাত করা, সংবিধানকে অমান্য করা, সংবিধানকে ধ্বংস করা-এটা অপরাধ। এই অপরাধ হলো সব চেয়ে গুরুতর অপরাধ। আইন ভঙ্গ করা তো অপরাধ বটেই। কিন্তু মৌলিক আইন ভঙ্গ করা মানে সেখানে যে মৌলিক অধিকার আছে, সেটাকে অমান্য করা। এর চেয়ে গুরুতর অপরাধ আর হয় না। এই অপরাধ এরা (সরকার) রীতিমতো করে যাচ্ছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য গুরুতরভাবে খারাপ হয়েছে। উনি তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। উনি মুক্তি পাবেন না, চিকিৎসা পাবেন না, এটা কল্পনা করা যায় না। আমি উনার মুক্তি দাবি করছি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, উপদেষ্টা ম লীর সদস্য এস এম আকরাম, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর