বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সম্রাট ১০ আরমান ৫ দিন রিমান্ডে আদালতে সমর্থকদের বিক্ষোভ

আদালত প্রতিবেদক

সম্রাট ১০ আরমান ৫ দিন রিমান্ডে আদালতে সমর্থকদের বিক্ষোভ

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে রমনা থানার অস্ত্র ও মাদক আইনের আলাদা দুই মামলায় ৫ দিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সিএমএম আদালত। একই সঙ্গে যুবলীগের আরেক বহিষ্কৃত নেতা ও সম্রাটের ঘনিষ্ঠ এনামুল হক আরমানকে শুধু মাদক মামলায় ৫ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. তোফাজ্জাল হোসেন আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এদিকে সম্রাটের মুক্তি দাবিতে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা সম্রাটের মুক্তি দাবিতে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ কর্মী-সমর্থকদের

নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খায়। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও আরমানকে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ঢাকার আদালতে আনা হয়। রাখা হয় আদালতের হাজতখানায়। পরে পৌনে ১টার দিকে সম্রাট ও আরমানকে হাতকড়া লাগিয়ে আদালতে তোলা হয়।      লোহার তৈরি আসামির কাঠগড়ায় ঢুকিয়ে দিয়ে তালা দেওয়া হয়। তখন এই যুবলীগ নেতা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিলেন। শুনানির সময় সম্রাটের হাতে পরানো হাতকড়া খুলে দিতে আদালতের কাছে আবেদন করেন আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারক সে বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি। এর আগে সম্রাটকে ঢাকার সিএমএম আদালতে রিমান্ড শুনানির জন্য হাজির করার খবরে সকাল থেকে আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় আদালতপাড়ার ফুটপাথের দোকানপাট। নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল র‌্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। বেলা সাড়ে ১১টার কিছু পরে সিএমএম আদালতের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশকে কয়েকজন সাধারণ মানুষকে তল্লাশি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া সিএমএম আদালতের মধ্যে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইনজীবী ছাড়া কাউকে আদালতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সম্রাটকে দেখার জন্য সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা ভিড় করতে থাকেন আদালতপাড়ায়। আদালতের ফটকের বাইরে ও জনসন রোডে জটলা করে তারা স্লোগান তোলেন- ‘সম্রাট ভাইয়ের মুক্তি চাই’, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’। এ ছাড়াও তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন সম্রাটের মুক্তির জন্য। সম্রাটকে আদালতে হাজির করার আগে নেতা-কর্মীদের আদালতের সামনের রাস্তা থেকে বের করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখন তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সম্রাটের মুক্তির জন্য দফায় দফায় স্লোগান দিতে থাকেন। এ ছাড়া আদালতপাড়ার দেয়ালে সম্রাটের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট মুক্তি পরিষদের অনেক পোস্টার সাঁটানো দেখা গেছে। সেসব পোস্টারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি রয়েছে। এ পোস্টারে লেখা, ‘সম্রাট খুবই অসুস্থ, মানবতার জননী তাকে বাঁচান।’ এ ছাড়া আরও লেখা রয়েছে, ‘সম্রাটের হাতে হাতকড়া রাজনীতিবিদেরা চরম লজ্জিত।’ এদিকে আদালতে সম্রাটকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সময় তাকে মাঝে-মধ্যে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে দেখা গেছে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাহফুজুল হক ভূঞা। এ ছাড়া অস্ত্র আইনের মামলায় শুধু সম্রাটকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন একই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। পরে আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ৯ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ৯ অক্টোবর সম্রাট অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাকে আদালতে হাজির না করায় ১৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করা হয়।

গতকাল প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু, একই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল ও এপিপি আজাদ রহমান। অন্যদিকে আসামির পক্ষে শুনানি করতে গাজী জিল্লুর রহমান, আবদুল কাদেরসহ প্রায় ২৫ জনের মতো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মাদক মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর কাকরাইলে সম্রাটের কার্যালয় থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, চার প্যাকেট তাস ও ১ হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের কোনো বৈধ কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। প্রাথমিক তদন্তে আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত মর্মে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আরমান সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং অবৈধ মাদকের জোগানদাতা। তারা পরস্পর যোগসাজশে মাদক সংরক্ষণ করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, আসামিরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ মাদক ব্যবসা, জুয়া ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত। তাই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অস্ত্র আইনের মামলার রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আটক করা হয়। আটকের সময় আরমান মাতাল থাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদ  দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে জানান, কাকরাইলের অফিসে আরও মাদকদ্রব্য ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ তার সহযোগীরা অবস্থান করছে। সে সংবাদ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে বেলা ১টার দিকে কাকরাইল অফিসে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। সম্রাটের বেডরুমের জাজিমের ওপরে তোশকের নিচ থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি ম্যাগাজিনসহ একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। রুম থেকে দুটি ইলেকট্রিক শক মেশিন ও দুটি লাঠি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আসামি উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। জানা গেছে, গত ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার এক সহযোগী যুবলীগের সহসভাপতি এনামুল হক আরমানকে কুমিল্লায় গ্রেফতার করে। এরপর র‌্যাব সম্রাটকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালায়। কার্যালয়ে ক্যাঙারুর দুটি চামড়া, মাদকদ্রব্য, অস্ত্র পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর