বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কাউন্সিলর সাঈদ এখন কোথায়

রাশিয়া সিঙ্গাপুরে শত কোটি টাকা পাচার

সাঈদুর রহমান রিমন

কাউন্সিলর সাঈদ এখন কোথায়

মতিঝিল ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোর হোতা খ্যাত কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ এখনো অধরা রয়ে গেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পরই ধূর্ত সাঈদ গা ঢাকা দিয়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সেখান থেকে তিনি চলে গেছেন রাশিয়ায়। সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই বছর আগেই রাশিয়ায় সেকেন্ড হোম গড়ে তোলেন কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। সেখানকার দুটি শহরে তার অভিজাত একাধিক ফ্ল্যাট কেনা রয়েছে। সেখানে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা-বাণিজ্যও। রাশিয়ার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার রয়েছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট মতিঝিল ক্লাবপাড়ার অন্যতম হোতা কাউন্সিলর সাঈদকে গ্রেফতারের ব্যাপারে নানা কৌশল অবলম্বন করে। বিভিন্ন নাটকীয়তার মাধ্যমে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব কৌশল ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যেই গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানতে পারে, গত সপ্তাহের কোনো এক দিন কাউন্সিলর সাঈদ ভারতের ত্রিপুরা দিয়ে আখাউড়া সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে তার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নেবেন। দেশে জরুরি কিছু সম্পদের দলিলপত্র সম্পাদন করেই আবার তিনি ফিরে যাবেন রাশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরে। খবর পেয়েই একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাঈদের নিজ বাড়ি এবং আশপাশে থাকা তার আত্মীয়স্বজনের বাড়িগুলোর প্রতি সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু করেন। কিন্তু কাউন্সিলর সাঈদ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত হঠাৎ বদল করেন এবং শনিবার তিনি রাশিয়া থেকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা দেন বলে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডে মমিনুল হকের ক্যাসিনোর ব্যবসা আছে। মাসে দু-তিনবার তিনি বিদেশে যাওয়া-আসা করেন। ২৩ জুন বিনা অনুমতিতে মমিনুল হকের বিদেশ ভ্রমণ আটকাতে পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অথচ এর পরও তিনি বিনা অনুমতিতে সিঙ্গাপুরে যেতে সক্ষম হন বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার। রাজধানীতে মাদক ও ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ার পর গা ঢাকা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলর। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সভাপতি। কাউন্সিলর হওয়ার পর সাঈদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ভবন দখল করে তিনি গড়ে তোলেন টর্চার সেল। তার হুকুম কেউ তামিল না করলেই টর্চার সেলে এনে নিপীড়ন করা হতো। সাঈদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। পারিবারিক ঝামেলার কারণে ২০০২ সালে তিনি ঢাকায় আসেন। এরপর মতিঝিলের দিলকুশা সাধারণ বীমা করপোরেশনের সামনের সড়কে দোকানদারি শুরু করেন। গাড়ির চোরাই তেলের ব্যবসাও করতেন তিনি। থাকতেন বঙ্গভবনের চার নম্বর গেটের কোয়ার্টারে। সেখানে তার মামা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি করতেন। পরে মোহামেডান ক্লাবে হাউজি খেলার সময় আলমগীর ও তাপসের ফুটফরমায়েশ খাটতেন। ২০০৭ সালের পর যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে তার সখ্য হয়। সেই নেতার হাত ধরেই সাঈদ ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হন। পরে যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সম্পাদক হন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাঈদ তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকা পাচার করেছেন সিঙ্গাপুর ও রাশিয়ায়। রাশিয়ায় তার নামে তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখতে রাশিয়ায় যান সাঈদ। সেখানে ১০ দিনেই তিনি ৫৬ হাজার ডলার খরচ করে ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বসবাসকারী বাংলাদেশি আবদুল্লাহ আল মামুন ওরফে রাজীবের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে কাউন্সিলর সাঈদের। তার মাধ্যমেই সেখানে সেকেন্ড হোম গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ আয়োজন চলে। সীমিত খরচে মদ, জুয়া আর সুন্দরী নারীর জন্য রাশিয়া পুরো দুনিয়ায় আকর্ষণীয় জায়গা। এই নেশাতেই রাশিয়ায় ঘন ঘন যেতে থাকেন সাঈদ। রাশিয়ার ব্যাংকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করতে থাকেন টাকা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজীবের সহায়তায় এসব টাকা তিনি জমা রেখেছেন রাশিয়ার এসবিআর ব্যাংক, আলফা ব্যাংক ও রাইফাইজান ব্যাংকে। রাজধানীর ক্যাসিনোর বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ ছিল কাউন্সিলর সাঈদের হাতে। সেই টাকা এখন রাশিয়ার ব্যাংকে রয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করেছে। একসময়ের তেল চুরির ব্যবসা করা মমিনুল হক সাঈদ এখন এলাকায় যান হেলিকপ্টারে চড়ে। এমপি হতে চান আগামী দিনে। এ জন্য দোয়া চেয়ে এলাকায় সাঁটিয়েছেন রংবেরঙের পোস্টার, যা ঝুলছে এখনো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর