বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মনিরের স্বীকারোক্তি

সাদাত ভারত পালানোর সময় গ্রেফতার

আলী আজম

‘স্টাম্প দিয়ে প্রচ- পেটাতে থাকে অনিক। আর্তচিৎকার দিয়ে ওঠেন আবরার। ওই সময় কক্ষে উপস্থিত অন্যরা ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু অনিকের পেটানো আর থামে না। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আবরারকে পেটাতে থাকে অনিক। রাত ১২টার দিকে অনিক কক্ষ থেকে বের হয়। তার অমানুষিক মারের পরই শ্বাসকষ্টে নিস্তেজ হয়ে পড়েন আবরার। বমি করেন। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। মৃত্যুর অপেক্ষায় গোঙানির মতো শব্দ করছিলেন আবরার। অবস্থা বেগতিক দেখে আবরারের মাথার নিচে বালিশ দেয় ইফতি। এভাবেই অনিকের আঘাতে নিহত হন আবরার।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আসামি মনিরুজ্জামান মনির আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এভাবেই সেই রাতের ঘটনা বর্ণনা দিয়েছে। গতকাল মনিরের এই জবানবন্দি রেকর্ড করেন ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনছারী। পরে নিয়মানুযায়ী তাকে কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান মনিরকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। এদিকে গতকাল ভোরে দিনাজপুর থেকে আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এ এস এম নাজমুস সাদাতকে গ্রেফতার করেছে ডিবি।

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে মনিরুজ্জামান মনির, শামসুল আরেফিন রাফাত ও মো. আকাশকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এর মধ্যে মনির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ ছাড়া নতুন করে রাফাতের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আর আকাশকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। আবরার হত্যা মামলায় এর আগে বুয়েটছাত্র ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ ও মেহেদী হাসান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত আসামি শামীম বিল্লাহ ও মোয়াজ আবু হোরায়রাকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

ছয় আসামির জবানবন্দি : এ পর্যন্ত আবরার হত্যা মামলায় ছয়জন আসামি জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের প্রায় সবার জবানবন্দি অভিন্ন। জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় আগেই টার্গেট করা হয় আবরার ফাহাদকে। এরই সূত্র ধরে ৪ অক্টোবর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা দেয়, আবরার শিবির করে, তাকে ধরতে হবে। এরপর মেসেঞ্জার গ্রুপে সাড়া দেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা। আবরার তখন বাড়িতে থাকায় ইফতিকে অমিত বলে, ‘ওকে বাড়ি থেকে ফিরতে দেন।’ এর এক দিন পর ৬ অক্টোবর বিকালে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ফেরেন আবরার। ওই রাতেই ২০১১ নম্বর  কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সাদাত গ্রেফতার : দিনাজপুরের বিরামপুর থানার কাঠলা থেকে গতকাল ভোরে আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এ এস এম নাজমুস সাদাতকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাদাত হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছিল। সাদাতসহ গতকাল পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করল ডিবি। সাদাতের বাবার নাম হাফিজুর রহমান। তাদের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই থানার কালাই উত্তর পাড়ায়। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান জানান, আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাদাত বিরামপুরের কাঠলা সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিল বলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল বিরামপুর থানায় আসে। পরে বিরামপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় উপজেলার কাঠলা গ্রামে সাদাতের আত্মীয় রফিকুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর ডিবি পুলিশ সাদাতকে ঢাকায় নিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েটের ১৭তম ব্যাচের ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার ফাহাদকে। রাত ৩টার দিকে হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আবরারের মরদেহ উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় একাধিক ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়। আবরারকে হত্যার ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে ওই ১৯ আসামিকে সাময়িক বহিষ্কার করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। হত্যায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে ছাত্রলীগ থেকেও তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। এ হত্যা মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর