শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নামের ভুলে ১৮ বছর আদালতে খেটেছেন হাজতও

নাটোর প্রতিনিধি

নামের ভুলে ১৮ বছর আদালতে খেটেছেন হাজতও

বাবলু শেখ

অপরাধ না করেও পুলিশ ও আইনজীবীর ভুলে আসামি হয়ে দুই মাস কারাভোগসহ ১৮ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরতে থাকা বাবলু শেখকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দিয়েছে আদালত। এ সময় এ ঘটনায় দায়ী তদন্তকারী দুই পুলিশ ও তৎকালীন ওসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইজিপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাবলু শেখকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। দায়ী আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনজীবী সমিতিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

গতকাল নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দিকী এ রায় দেন।           বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম উদ্দীন জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর বাবলু শেখের আপিল শুনানির রায়ের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন দুপুরে নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাইফুর রহমান সিদ্দিকী মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানান, বাবলু শেখের বিষয়টি আলোচিত ঘটনা হওয়ায় তা অধিক পর্যালোচনা করা হবে। তাই ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যবেক্ষণসহ রায়ের দিন ধার্য করেন তিনি। কিন্তু ওই তারিখে নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মোজাম্মেল হকের মৃত্যুর কারণে ফুলকোর্ট রেফারেন্স ঘোষণা হওয়ায় আদালতের সব কার্যক্রম স্থগিত হয়। ফলে বাবলু শেখের মামলার রায়ের দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়। পরে মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত ১৭ অক্টোবর আপিল শুনানির রায়ের দিন ধার্য করে।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল নাটোর সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির মামলার আসামি শ্রী বাবুর পরিবর্তে সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের বাবলু শেখকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এরপর তৎকালীন আইনজীবী লুৎফর রহমান শ্রী বাবু নামেই বাবলু শেখের জামিন করান। সেই থেকে বাবলু শেখ হয়ে যান শ্রী বাবু। দুই দফায় দুই মাস কারাভোগের পর ১৮ বছর ধরে হতদরিদ্র বাবলু শেখ নিজের সঠিক পরিচয় জানাতে ঘুরে বেড়ান আদালতের বারান্দায়।

বাবলু শেখের গল্প : সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের বাবলু শেখ (৫৫)। পেশায় চা দোকানি বাবলু শেখের বেলায় ঘটেছে আলোচিত জাহালমের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। বাবলু শেখ  মাসের পর মাস হাজত খেটেছেন। ১৮ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরপাক খেয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিচারক প্রকাশ্য আদালতে রায় পড়ে শোনান। এ সময় আদালতে ভুক্তভোগী বাবলু শেখ, তার স্ত্রী-সন্তানরা ছাড়াও উৎসুক এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিচারক তার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, বাবলু শেখ বহুল আলোচিত ‘জজ মিয়া’ ও ‘জাহালম’-এর প্রতিচ্ছবি। তিনি বংশপরম্পরায় একজন মুসলমান হলেও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা শ্রী বাবু হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে দায়িত্বে চরম অবহেলা করেছেন। গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে গেলে সদর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসামিকে পরীক্ষা না করেই চালান বইয়ে স্বাক্ষর করে অন্যায় করেছেন। যদিও আদালতের নথিতে রহস্যজনকভাবে ওই চালানের কপি সংযুক্ত  নেই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আদালতও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সর্বশেষ খবর