শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিশু হত্যাকারীদের কঠোর সাজা পেতে হবে

রাসেলের স্মৃতিচারণ করে অশ্রুসিক্ত শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিশু হত্যাকারীদের কঠোর সাজা পেতে হবে

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু নির্যাতনকারীদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আমরা চাই না আর কোনো শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হোক। যারা শিশু নির্যাতন বা শিশু হত্যা করবে তাদের কঠোর সাজা পেতে হবে। শিশুদের প্রতি কোনো অন্যায়-অবিচার বরদাস্ত করা হবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রিয় ছোট ভাই শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বার বার অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। সম্মেলনস্থল ছেয়ে যায় পিনপতন নীরবতায়। এক সময় কান্নায় ভেঙে পড়লে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত শত শত শিশু-কিশোরও নিজেদের অশ্রু সংবরণ করতে পারেনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের হাতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার তুলে দেন। 

একাত্তর ও পঁচাত্তরের হত্যাকাে র বিচারের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার হবে না- এ আইন করে খুনিদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন মামলা করতে চেয়েছিলাম। আমাকে বলা হলো, মামলা করা যাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিছু দিন ধরে দেখছি, শিশুদের ওপর অমানবিক অত্যাচার। সেই সময় যদি শিশু হত্যাকারী, নারী হত্যাকারীর বিচার করা হতো তাহলে অন্তত মানুষের ভিতরে একটা ভয় থাকত। এ ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠত না। তিনি বলেন, কী আর্শ্চয ঘটনা, বাবা হয়ে সন্তানকে হত্যা করে অন্যকে ফাঁসানোর জন্য। কী বিকৃত মানসিকতা মানুষের মাঝে। আমরা চাই, আর কোনো শিশু যেন এ ধরনের হত্যার শিকার না হয়। প্রত্যেক শিশু যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের চেয়ারম্যান রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মাহমুদ উদ সামাদ এমপি, সাংগঠনিক সচিব এ কে এম শহীদ উল্যা প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের সততা নিয়ে বড় হতে হবে। সততা থাকলে কারও কাছে মাথানত করতে হয় না। সততার মধ্যে এক অন্যরকম শক্তি থাকে। আর সব ধরনের অন্যায় এবং জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে।   

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন বড় বোন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাসেল আমাদের পরিবারের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য। পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষের প্রতি দরদি মন ছিল রাসেলেরও। আজকে শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে হয়তো দেশের জন্য অনেক কিছু করত। মাঝে মাঝে মনে হয় ৫৪ বছর বয়সে কেমন হতো দেখতে তাকে? বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত চোখে থেমে যান প্রধানমন্ত্রী। কিছুটা সময় বিরতি নিয়ে চোখ মুছে নেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, রাসেলের জন্ম হয়েছিল ১৯৬৪ সালে। ঠিক যেই মুহূর্তে রাসেল জন্মায় তখন আব্বা খুব ব্যস্ত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, ফাতেমা জিন্নাহ প্রার্থী। তিনি সেই নির্বাচনে প্রচারণার কাজে চট্টগ্রামে ছিলেন। রাসেলের জন্ম হওয়ার পর আমরা তাকে খবর দিই। তিনি বলেন, আমরা চার ভাই-বোন উদ্বিগ্ন হয়ে বসেছিলাম এই ছোট্ট শিশুটির জন্ম মুহূর্তটা এবং তারপর তাকে কোলে নেওয়া। তাকে লালন-পালন করা তার পাশে থাকা। জাতির জনক ’৬৭ সালে যখন কারাগারে গেলেন রাসেলের বয়স তখন দুই বছরও হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারাগারে যেতাম আব্বার সঙ্গে দেখা করতে।

শেখ রাসেলের জন্মদিন পালিত : শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় গতকাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৫তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। গতকাল সকালে বনানী কবরস্থানে শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টে নিহত শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী। বনানী কবরস্থানে এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিম লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর