শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নমুখী : অর্থমন্ত্রী

মানিক মুনতাসির, ওয়াশিংটন (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে নিম্নমুখিতা দেখা দিয়েছে। চীনের প্রবৃদ্ধি ১৪ থেকে ৭ শতাংশে নেমে গেছে কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কল্পকাহিনীর মতো মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। এতে সবচেয়ে বড় অবদান বাংলাদেশের মানুষের। এর আগে ২০০৮ সালে বিশ্ব মন্দার সময়েও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণ, আমাদের উৎপাদন ও চাহিদা আমরা নিজেরাই তৈরি করি। ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার অংশ হিসেবে আইএমএফের ভাইস প্রেসিডেন্ট              ও বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের নির্বাহী পরিচালক অপর্ণা সুভ্রামণির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এদিকে গতকাল আইএমএফের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ক্রিস্টিলিনা জর্জিভা। অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলন করে ধনী দেশগুলোকে গরিব দেশগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান বিশ^ব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ব্রিফিংয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে। আমাদের অগ্রগতি দেখে তারা অভিভূত। অন্য দেশগুলোর কাছে আমাদেরকে তারা ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে। আইএমএফ তাদের আউটলুকে বলেছে, বছর শেষে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এটা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এ সময় সবাইকে ডাবল চাকরি করতে হবে। এখন গ্রামে মেশিন দিয়েও ধান কাটার মানুষ পাওয়া যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা খুবই ভালো। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থানের প্রশংসা করেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বসেরা। দুটি দ্বীপ রাষ্ট্র ছাড়া বাংলাদেশের সামনে কেউ নেই।

দেশের সার্বিক অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বছর শেষে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩ শতাংশের কম হবে না। দেশের সার্বিক অগ্রগতির রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সকল পর্যায়ের মানুষ অবদান রাখছেন। কৃষি খাতে ২০, শিল্পে ৩০ ও সেবা খাতের অবদান ৫০ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। তারপরও বাংলাদেশ সঠিক অবস্থান ধরে রেখেছে। আমরা দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বৃহৎ ২০টি অর্থনীতির দেশের মধ্যে থাকবে। ২০৩৩ সালে ২৪তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। আমরা সেই অপেক্ষায় রয়েছি। এদিকে বিশ্বে এখনো ৭০ কোটি মানুষ দরিদ্র বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, স্থবির বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের দুর্বলতা বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সংকটে ফেলছে গরিব দেশগুলোকে। বিশ্বে এখনো ৭০ কোটি মানুষ হতদরিদ্র, যা প্রতি ১২ জনে একজন। তিনি বলেন, দারিদ্র্য কমানোর লক্ষ্য অর্জনে বছরে অন্তত জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে অবকাঠামো উন্নয়নে। এ সময় বাংলাদেশসহ গরিব দেশগুলোকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা অব্যাহত রাখা এবং বাড়ানোর ঘোষণাও দেন তিনি।

আসছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী : বিশ্বব্যাংকের সভায় অংশ নিয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ও বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আলাদাভাবে কথা বলেন। এ সময় নির্মলাকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান মুস্তফা কামাল। নির্মলা সীতারমন যে কোনো সময় ঢাকা সফরে আসবেন বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে জানান।

সর্বশেষ খবর