রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

হচ্ছে না বিএনপির কাউন্সিল

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আগামী বছর সম্মেলনের ইচ্ছা, ডিসেম্বরের মধ্যে দলের ৮১টি সাংগঠনিক জেলা পুনর্গঠনের টার্গেট, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঢেলে সাজানো হবে অঙ্গ-সহযোগী সব সংগঠন

শফিউল আলম দোলন ও মাহমুদ আজহার

হচ্ছে না বিএনপির কাউন্সিল

সর্বশেষ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। তিন বছর মেয়াদি কমিটি সাত মাস ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। নির্ধারিত সময়ে হলো না বিএনপির সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল। এ বছর আর কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। মুক্ত বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নতুন বছর কাউন্সিল করার কথা ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। কিছুদিন আগেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, শিগগিরই তারা দলের সপ্তম কাউন্সিল করবেন। কিন্তু দলের হাইকমান্ড এখন সেই অবস্থান থেকে সরে গেছে। দলটির নীতিনির্ধারকরা এখন বলছেন, কাউন্সিল করতে আরও কিছুদিন লাগবে। সার্বিক প্রস্তুতি নেই। বেগম জিয়া এখনো কারাবন্দী। তাঁর মুক্তি না হলে আপাতত কাউন্সিল থেকে বিরত থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তা ছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে দলের সাংগঠনিক ৮১টি জেলা গুছিয়ে ফেলতে চায় বিএনপি। এর মধ্যে অসম্পূর্ণ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটা চলমান প্রক্রিয়া। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, আবারও গঠন করা হবে। এভাবে চলতেই থাকবে। আর সারা দেশে জেলা-উপজেলাসহ সর্বস্তরে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হওয়ার পর কাউন্সিলরের চূড়ান্ত তালিকার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরই জাতীয় কাউন্সিল হবে। অর্থাৎ দুই দিন আগে হোক কিংবা পরে- সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরই ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হবে। এ নিয়ে সংশয়ের কিছু নেই।’ তবে বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘কাউন্সিল নিয়ে এত তাড়াহুড়া কীসের? ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগ অনেক দেরিতে কাউন্সিল করেছে। কিন্তু এবার বিএনপি তো পরাজিত হয়নি, কারসাজি এবং জোর করে হারানো হয়েছে। দেশব্যাপী আস্তে-ধীরে প্রস্তুতি নিয়ে এবং বেগম জিয়ার কারামুক্তির পর হবে এ কাউন্সিল।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে দলটির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার বেশির ভাগেরই কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। নতুন করে ১৯টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এগুলো হলো- নীলফামারী, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নওগাঁ, যশোর, বগুড়া, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সৈয়দপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, নেত্রকোনা, পঞ্চগড়, ঝিনাইদহ, মাগুরা, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ফেনী ও সিলেট। তিন মাসের জন্য গঠিত এ আহ্বায়ক কমিটিগুলোর মধ্যে ১২টির মেয়াদ পার হয়েছে ইতিমধ্যেই। এর মধ্যে ৯টি সাংগঠনিক জেলায় আংশিক থেকে পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। এগুলো হলো- জামালপুর, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট ও শেরপুর। একই অবস্থা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ক্ষেত্রেও। সূত্রমতে, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল ও তাঁতী দলের আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় সম্মেলনের পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণের বিষয়েও সংশয় রয়েছে নেতাদের। আজ রবিবারের মধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদলের কাউন্সিল ও ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে দুই সংগঠনের নেতারা। এদিকে কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেও সবার মন রক্ষা করতে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হিমশিম খাচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, এবার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ‘ঢাউস’ কমিটি হবে না। গঠনতন্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে সব কমিটি গঠন করতে হবে। জানা যায়, কোনো কারণে বিএনপি কাউন্সিল করতে না পারলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অসম্পূর্ণ পদগুলো পূরণ করা হবে। বিএনপির ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে সক্রিয় মাত্র আটজন। শূন্যপদই আছে তিনটি। ভাইস চেয়ারম্যান পদও বেশ কয়েকটি শূন্য। নির্বাহী কমিটিতে কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। কোনো কারণে কাউন্সিল না হলে এগুলো পূরণ করা হবে। এরই মধ্যে স্থায়ী কমিটিতে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাকিগুলোও পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হবে। আবার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ‘এক নেতার এক পদ’ বাস্তবায়ন করা হলে আরও বেশকিছু পদ শূন্য হবে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ভোটের মাধ্যমে সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সর্বত্র সব কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশে কমিটি গঠনের কাজ চলছে। পুরোপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরই জাতীয় সম্মেলন হবে।’ উল্লেখ্য, বিএনপির সর্বপ্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয়টি ’৮২ সালের ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় ’৮৯ সালের মার্চ, চতুর্থ ’৯৩ সালের সেপ্টেম্বর, পঞ্চম ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর এবং সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ।

সর্বশেষ খবর