রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাজার মনিটরিং শুধুই শহরকেন্দ্রিক

ভোক্তা অধিকারের মাত্র একজন অফিসার কাজ করেন জেলায়, স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানও নামমাত্র, মূল্য তালিকা নেই উপজেলা পর্যায়ের বাজারগুলোতে, পৌরসভা ইউনিয়ন পরিষদেরও ভূমিকা রাখা উচিত : ক্যাব

আরাফাত মুন্না

বাজার মনিটরিং শুধুই শহরকেন্দ্রিক

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা সদরেই টঙ্গিবাড়ী বাজার। ছোট-বড়, খুচরা-পাইকারি মিলিয়ে হাজারখানেক দোকান এ বাজারে। বৃহস্পতিবার এখানকার কাঁচাবাজারে গিয়ে কোনো মূল্য তালিকা দেখা যায়নি। মূল্য তালিকা যে থাকার কথা তা জানেন না ক্রেতা-বিক্রেতা অনেকেই। ফলে ইচ্ছামতো দাম হাঁকিয়ে চলছে বেচাকেনা। ঠকছেন ক্রেতারা। এ চিত্র শুধু টঙ্গিবাড়ী বা মুন্সীগঞ্জের নয়, শহরাঞ্চলের বাইরের প্রায় সব বাজারেরই। রাজধানীর বাজারগুলোয় নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন সাত-আটটি অভিযান পরিচালিত হলেও গ্রামের বাজারে নজর নেই কারও। ভোক্তা অধিকারের একজন অফিসার ও একজন কম্পিউটার অপারেটর-কাম-অফিস সহকারী দিয়েই চলছে পুরো জেলার কার্যক্রম। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকাও নামমাত্র। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাজধানীতে যে অভিযানগুলো পরিচালিত হয়, তাও পর্যাপ্ত নয়। গ্রামের অনেক মানুষ তো ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জানেনই না। তাই নিত্যপণ্যের দাম ঠিক রাখতে সারা দেশের মানুষকে যেমন আইনগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে, সচেতন করতে হবে, একইভাবে উপজেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকেও ভূমিকা রাখতে হবে। একই সঙ্গে বাজার মনিটরিং-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) টঙ্গিবাড়ী উপজেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর যেমন তৎপরতা থাকা প্রয়োজন, আমাদের উপজেলায় তেমন তৎপরতা দেখি না।’

এ বিষয়ে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা আক্তার মনে করেন, সক্রিয় বাজার কমিটি না থাকার কারণেই গ্রামের বাজারগুলোর পণ্যের দাম ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মাঝেমধ্যেই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করি। কিন্তু বাজার কমিটিগুলো অ্যাকটিভ না থাকায় অভিযানগুলো ফলপ্রসূ হয় না। এজন্য কমিটিগুলোকে সক্রিয় করতেও আমরা কাজ করছি।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি সমন্বিত টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ টিমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকেন। ঢাকার দুই সিটিতে দুটি টিম অভিযান পরিচালনা করে। এ ছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের তিন থেকে চারটি টিম প্রতিদিন বাজার অভিযান পরিচালনা করছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লোকবল সংকটের কারণে অধিদফতরের কাজগুলো একরকম থমকে আছে। একটি জেলায় মাত্র একজন সহকারী পরিচালক ও একজন কম্পিউটার অপারেটর-কাম-অফিস সহকারী দায়িত্ব পালন করেন। জেলার অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এজন্য নতুন ২ হাজার ৩০০ পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হয়ে বিষয়টি এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (উপসচিব) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভোক্তার অধিকার অক্ষুণœ রাখতে আমাদের কর্মকর্তারা অনেক তৎপর। লোকবল সংকট থাকলেও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। এ বছর সারা দেশে ১০ হাজার অভিযান পরিচালনার একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করছি হাজার হাজার অভিযোগ নিষ্পত্তির পরও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।’ জানতে চাইলে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষের ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম ঠিক রাখাটা সরকারের দায়িত্ব। অনেক সময় দেখা যায়, মজুদদারি, সরবরাহ ব্যাহত করা, চাঁদাবাজি এমন নানা অপকর্মের কারণে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং দুষ্কৃতকারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে। এজন্য মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে নিজ নিজ দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার কিন্তু সব সময়ই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইনসহ অনেক আইন করেছে বাজার ঠিক রাখতে। এ আইনগুলো বাস্তবায়নে আরও তদারকি প্রয়োজন।’ ভোক্তা অধিকারের মাত্র একজন কর্মকর্তা দিয়ে জেলা চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকবল সংকটের একটা বিষয় তাদের রয়েছে। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআইসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত জরুরি।’

সর্বশেষ খবর