রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ক্যাসিনো টেন্ডারবাজির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক

৫০ রাঘববোয়ালের তালিকা

আহমেদ আল আমীন

ক্যাসিনো ব্যবসা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে সাম্প্রতিক আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, আওয়ামী লীগের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান টিমের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তালিকায় নাম আসা রাঘববোয়ালদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের ভয়ঙ্কর চিত্র বেরিয়ে আসছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পাশাপাশি বিদেশে ওইসব ব্যক্তির অর্থ পাচারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে দুদক। অনুসন্ধানের প্রয়োজনে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্যাসিনো ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিকদের বিরুদ্ধে কমিশনের অনুসন্ধান চলছে। এরই মধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকা আরও বাড়তে পারে। অনুসন্ধান শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, অতিসম্প্রতি মানি লন্ডারিং ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের তথ্য-উপাত্ত দুদকের কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ব্যাংক ও র‌্যাব। এর বাইরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, ইসিতে দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের হলফনামা ও দুদকের নিজস্ব অনুসন্ধানের আলোকে তালিকা প্রস্তুত করছে কমিশন। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তাদের অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ বা স্থগিত করা হয়েছে। ব্যাংক লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া এনবিআর, ভূমি অফিস, সাবরেজিস্ট্রি অফিস, রিহ্যাবসহ বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে সংশ্লিষ্টদের অর্থ সম্পদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমপি শামসুল হক ও শাওন ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে কতটুকু জড়িত, এক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিএফআইইউ এবং র‌্যাবসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি দুদকের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দুদকের তালিকায় কারা : চট্টগ্রাম-১২ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী এবং ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের নাম দুদকের তালিকায় এসেছে। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় যুবলীগ নেতা শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে অভিযান শুরু হওয়ার কয়েক দিন পর চট্টগ্রামে অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নামও রয়েছে দুদকের নথিতে। জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী, আলোচিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা ও মা আয়েশা খাতুনের সম্পদের অনুসন্ধানও চালাবে দুদক। এ তালিকায় উঠে এসেছে গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই ও উৎপল কুমার দে, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিমের নামও। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, গে ারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু, তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটির দুই কাউন্সিলর এ কে এম মোমিনুল হক ওরফে সাঈদ কমিশনার ও হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বকুলের সম্পদেরও খোঁজ নেবে কমিশন। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, তার স্ত্রী এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজসহ তাদের সহযোগীদের নামও তালিকায় রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, জি কে শামীমের ক্যাশিয়ার যুবলীগের সোহেলের সম্পদের অনুসন্ধান চালাবে কমিশন। জানা গেছে, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান, শফিকুল ইসলাম ফিরোজ, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও সেলিম প্রধান র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও র‌্যাবের সহযোগিতা : ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান ও অর্থ পাচারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কাছ থেকে সহযোগিতা নিচ্ছে দুদক। ৯ অক্টোবর র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ দুদকের কাছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের তথ্য হস্তান্তর করেন বলে জানা গেছে। পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান দুদকের কাছে ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের অর্থ পাচারের গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তর করেন। এ ছাড়া অর্থ পাচার রোধ, পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার ও জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে বিএফআইইউয়ের সঙ্গে গত সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক সমঝোতা করেছে দুদক। এর আগে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ক্যাসিনো ব্যবসা দুদকের এখতিয়ারে না থাকলেও এর সঙ্গে জড়িতদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি কমিশনের তফসিলভুক্ত বলে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান টিম গঠন করে সংস্থাটি। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান টিমের অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সালাউদ্দিন আহম্মেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ও নেয়ামুল আহসান গাজী। অনুসন্ধান টিমের কার্যক্রম তদারক করছেন কমিশনের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান।

সর্বশেষ খবর