রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কী সিদ্ধান্ত আজ আসছে যুবলীগে

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুবলীগের চলমান সংকট নিরসনে সংগঠনের ৪০ নেতাকে নিয়ে বৈঠকে বসছেন যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বিকাল ৫টায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে তিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দিয়ে প্রেসিডিয়ামের কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব, কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং ছাত্রলীগের মতো যুবলীগেরও বয়সসীমা নির্ধারণ। সংগঠনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপরোক্ত তিন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ছাড়াও আজই শুরু হচ্ছে যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান। চলমান দুর্নীতি ও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিতর্কের মুখে পড়া যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতি ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে আজকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তাকে ডাকা হয়নি। চেয়ারম্যানকে বাইরে রেখে কংগ্রেসের প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হবে আজ। কংগ্রেস সম্পন্ন করে বিদায় নেওয়ার সুযোগ চাইলেও প্রধানমন্ত্রীর অনড় অবস্থানের কারণে জাতীয় কংগ্রেসের কোনো প্রক্রিয়ায় ওমর ফারুককে থাকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। আজকের বৈঠকে তার ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গণভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ২৬ প্রেসিডিয়াম সদস্য, ৯ সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৫ যুগ্মসাধারণ সম্পাদক- মোট ৪০ জনের তালিকা গণভবনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মোট ৪০ জনের তালিকা গণভবনে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ে কারও ব্যাপারে আপত্তি এলে তিনি গণভবনে ঢুকতে পারবেন না। এ ছাড়া সংগঠনের চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের গণভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের গণভবনে যাওয়া নিষেধ, তাহলে কি কার্যত তিনি অপসারিত? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গত শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘গণভবনে এই মিটিং ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে কাকে ডাকবেন আর কাকে ডাকবেন না, তা প্রধানমন্ত্রীর বিষয়। এটি পার্টি অফিসে ডাকা হলে আমি বলতে পারতাম।’

সূত্রমতে, যুবলীগের কংগ্রেস সামনে রেখে নেতাদের বয়স নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন বয়স্ক নেতাদের ভারে ন্যুব্জ যুবলীগ। সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যানের বয়স ৭১ বছর। আর সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদের বয়স ৬৫ বছর। এ ছাড়া প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্পাদম লীর অনেকের বয়সও ৬০ ছাড়িয়ে গেছে। এই বয়সী নেতাদের যুবলীগের নেতৃত্বে থাকাটা কা জ্ঞানের সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। আজকের বৈঠকে যুবলীগের বয়স কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হবে কিনা- জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যুবলীগ নেতাদের বয়স নিয়ে বহু কথা হচ্ছে। আগামী নেতৃত্ব নির্ধারণে বয়স কাঠামো ঠিক করে দেওয়া হবে কিনা মিটিংয়ে আলোচনা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।’ যুবলীগের বয়সসীমা নিয়ে আলোচনায় সাবেক ছাত্রনেতারা খুশি হলেও নারাজ হয়েছেন বর্তমান কমিটিতে থাকা পদপ্রত্যাশী পঞ্চাশোর্ধ্ব নেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা জানিয়েছেন, অতীতে যারাই যুবলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে এসেছেন, তারা প্রত্যেকেই সংগঠনের বিভিন্ন পদপদবিতে ছিলেন। যুবলীগের রাজনীতিতে পরিপক্ব না হলে তাদের দায়িত্ব দেওয়া হলে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, যুবলীগেও তাই ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়েই শীর্ষ নেতৃত্ব সাজাতে হবে। যুবলীগের কমিটিতে ৪৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হলে অনেক যোগ্য নেতৃত্বই বাদ পড়বেন; সারা দেশের সাংগঠনিক চিত্র যেসব নেতার নখদর্পণে রয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী- জানতে চাইলে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুবলীগের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করতে পারিনি। সে বিষয়ে আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে সমাধান চাইব। আমাদের এক ধরনের সাংগঠনিক শূন্যতা যাচ্ছে, সেই শূন্যতা পূরণ, কংগ্রেসের আহ্বায়ক কে হবেন সেসব বিষয়ে সুরাহা হবে। যুবলীগের কংগ্রেসকে বর্ণাঢ্য ও সুশৃঙ্খল করতে যা যা করণীয় সেসব দিকনির্দেশনা আসবে। আমরা চাই এই কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবসমাজের মধ্যে একটা রাজনৈতিক বার্তা দিতে।’ আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘যুবলীগের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের অভিভাবক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে অবহিত করব। তিনি যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই নির্দেশনা নিয়েই কাজ করব।’

সর্বশেষ খবর