মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সোশ্যাল মিডিয়ায় চাই সিকিউরিটি ফিল্টারিং

-লে. জে. (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর

জুলকার নাইন

সোশ্যাল মিডিয়ায় চাই সিকিউরিটি ফিল্টারিং

সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবরের মতে, ধর্মীয় উসকানি বন্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিকিউরিটি ফিল্টারিংয়ের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সঠিক কাউন্সেলিংয়েরও প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। লে. জে. (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক ধরনের সুফল আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এর সুফলের চেয়ে কুফল বেশি দেখা যায়। আমরা নেতিবাচকভাবে বেশি ব্যবহার করি। ২০০৯ সালের পর হিযবুত তাহরির নামের একটি সংগঠন ছিল। পরে এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সংগঠনের কাজে ছিল পজিটিভ জিনিসকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা। তারা খুব কার্যকরভাবেই তা করত। তারা মিয়ানমারের বিভিন্ন ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশে অপপ্রচার চালিয়েছিল। গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হওয়ার পরও কিছু পজিটিভ মডারেট লোকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন ফলস আইডি খুলে ব্লগিং করে ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়ে এগুলোর ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। ব্লগিং বিষয়টাকে অত্যন্ত স্পর্শকাতরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ বাংলাদেশিরা সাধারণত ধর্মভীরু জাতি। মানুষের এই সাধারণ সেন্টিমেন্টকে তারা ব্যবহার করে। যেহেতু আমরা বাংলাদেশিরা বেশির ভাগই শিক্ষিত নই, অনেকে ধর্ম সম্পর্কে সেভাবে জানিও না, কোরআন শরিফের অর্থ ঠিক সেইভাবে আমরা অনেকে জানি না, এ কারণে আমাদের বেশ সহজেই প্রভাবিত করা যায়। এ সুযোগ গ্রহণ করেই একটার পর একটা সিচুয়েশন ক্রিয়েট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বুয়েটে আবরার হত্যার ঘটনা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। অবশ্য এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

 তিনি বলেন, কোনো কোনো দেশে দেখা যায়, অবশ্য আমি এটা সমর্থন করি না, নিরাপত্তার খাতিরে চীন ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে দেখা যায়, তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে রেস্ট্রিকটেড করে রাখে, যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ভুলভাবে ব্যবহার করা না যায়। অনেকে মনে করে, উন্নতি ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য এটা বাধা। বাংলাদেশে একবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। অবশ্য কিছু সময় পরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সচেতনতার প্রয়োজন, এর যথেষ্ট ঘাটতি আছে। লিখতে-পড়তে পারলেই তো শিক্ষিত হয় না, শিক্ষিত হতে হলে এক ধরনের সচেতনতার প্রয়োজন। এটা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে বেশ খানিকটা অনুপস্থিত। তাই বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার বন্ধ না করে এক ধরনের ফিল্টারিং করা প্রয়োজন। কেউ যাতে এর অপব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সচেতন দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।

এ জন্য এক ধরনের মনিটরিং রাখতে হবে। উন্নত বিশ্বে এ ধরনের মনিটরিং ব্যবস্থা আছে। আমরা বাইরে থেকে এই মনিটরিং বুঝতে না পারলেও খুব সূক্ষ্মভাবে সামাজিক উসকানিমূলক সব ধরনের ইস্যু নিয়ে করা পোস্ট বা নিউজ নিয়ন্ত্রণ করা হয় উন্নত বিশ্বে। তাই সবার প্রপাগান্ডা ছড়ানোর সুযোগ সেখানে থাকে না। বাংলাদেশে এখন এই নেতিবাচক বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি মনিটরিং ব্যবস্থা আনতে হবে, যেন উসকানিমূলক কোনো কিছু হঠাৎ করে মানুষকে তাড়িত করতে না পারে। সাবেক এই সামরিক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোটিভেশন ও কাউন্সেলিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটো জিনিসের দরকার আছে। কেউ কিছু লিখলেই তা দেখে আমাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে- এ ধরনের মনোভাব থেকে আমাকে দূরে থাকতে হবে। চিলে কান নিয়ে গেছে কি না তা দেখে আমাদের দৌড়াতে হবে। শুধু শুনলাম চিলে কান নিয়ে গেছে, সেটা শুনে দৌড় দিলাম, একবার হাত দিয়ে কান আছে কি না দেখলাম না, এতটা হঠকারী হওয়ার সুযোগ নেই। তাই সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বেশ কিছু রাজনৈতিক ও উগ্রবাদী গোষ্ঠী স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে বিশেষ উদ্দেশ্যে ভিন্নভাবে ব্যবহার করে। সাম্প্রদায়িক উসকানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, এর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কোরআন শরিফেও আছে, যার ধর্ম তার। বিচার সেটা আল্লাহই করবেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইস্যুগুলোকে উসকানির ক্ষেত্রে খুব বেশিভাবে ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের সাম্প্রদায়িক উসকানি বন্ধ করতেই হবে। সার্বিকভাবে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর