মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বল্পোন্নত হিসেবে শেষ সুযোগ কাজে লাগাবে বাংলাদেশ

শেষ হলো বিশ্বব্যাংক আইএমএফের বার্ষিক সভা

মানিক মুনতাসির, ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃত পাবে ২০২৪ সালে। এর আগ পর্যন্ত নমনীয় সব ঋণের পুরো সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এর অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (আইডিএ) তাদের প্রতিশ্রুত অর্থের পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে সহজ শর্ত ও নমনীয় সুদের ঋণ প্রাপ্তির শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভা শেষ হয়েছে গতকাল। সমাপনী অধিবেশন, প্ল্যানারি সেশন ও বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। শেষ মুহূর্তে সেসব দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা করে সক্ষমতার ভিত্তিতে নেগোসিয়েশন করেছে দেশগুলো। এর অংশ হিসেবে আইডিএর কাছ থেকে সহজ শর্তের ঋণ কর্মসূচি-২০১৮ সফলভাবে সম্পন্ন করায় আইডি-২০১৯-এ প্রতিশ্রুতির পরিমাণ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি। এতে ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত এ কর্মসূচির আওতায় ছয় বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থ ব্যয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বেড়েছে এটা উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছে পরিষ্কার। ফলে আমাদের নেগোসিয়েশনের ক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে।’ অন্যদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেছেন, আইডিএ তাদের অর্থায়নের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মনোয়ার আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের ধারণা পরিবর্তন হয়েছে। সবখানেই বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বব্যাংক। আগে বিশ্বব্যাংকে ঋণের জন্য নানাভাবে বলতে হতো। এখন বিশ্বব্যাংক ঋণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে বলে। আইডিএ-১৮ শেষ হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে শুরু হবে আইডিএ-১৯। স্বল্প সুদে ঋণ গ্রহণের এটাই শেষ সুযোগ। আমরা এটাকে কাজে লাগাতে চাই।’ দেশের উন্নয়নে নানা ধরনের প্রকল্প বাড়ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। বাস্তবায়ন করা হচ্ছে নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প। ফলে বাড়ছে এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতার হার। এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশকে বাড়তি ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বিশ্বব্যাংক।

এদিকে মাথাপিছু আয়সহ জাতিসংঘের কয়েকটি সূচকের উন্নতি হওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ২ শতাংশ সুদের শর্তে ঋণ চুক্তি করতে হবে। আইডিএ তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে সময় পাওয়া যেত ৩৮ বছর। অন্যদিকে আগে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ড (রেয়াত কাল) ছিল। কিন্তু এখন এক বছর কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব দিক দিয়েই বিশ্বব্যাংকের ঋণে শর্ত কঠিন করা হবে। বিশ্বব্যাংকের এবারের বার্ষিক সভায় সবখানেই আলোচনায় মুখ্য বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান। সেই সঙ্গে আলোচনায় ছিল বিশ্বমন্দার কবলে থাকা বড় দেশগুলোর উদার বাণিজ্যনীতির ব্যর্থতা এবং মুদ্রা পাচারের মতো অপরাধ ঠেকাতে না পারা। বৈশ্বিক কর এবং ব্যাংক ব্যবস্থারও সমালোচনা হয় এবারের সভায়। কোনো দেশের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে নিজ নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া আর্থিক খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিতের পরামর্শ দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের।

 

সর্বশেষ খবর