মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চুক্তিভিত্তিক ছয় বছরসহ তিনি আছেন ১০ বছর ধরে

নিজামুল হক বিপুল

নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে টানা ১০ বছর ধরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব শহিদুল হক। ১০ বছর ধরে এই পদ আঁকড়ে থাকার পর এবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান তিনি। এ জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন জায়গায়। আর এ নিয়ে ক্ষুব্ধ মন্ত্রণালয়ের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন, শহিদুল এবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলে এই নিয়োগের বিরুদ্ধে তারা আদালতে মামলা করবেন। শহিদুল হকের কর্মকা- নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শহিদুল হক লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব হিসেবে (চলতি দায়িত্ব) নিয়োগ পান ২০০৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর। এরপর তিনি ভারপ্রাপ্ত সচিব হন। তারপর পূর্ণ সচিব। নিয়মিত সচিব হিসেবে তিনি ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে শহিদুল হক এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর নানাভাবে তদবির করে ২০১৫ সালে তিনি আবারও দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাগিয়ে নেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ফের নানা কৌশল অবলম্বন করে শহিদুল হক দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। আগামী ৩১ অক্টোবর তার এই মেয়াদের চুক্তি শেষ হবে। দফায় দফায় চুক্তি নিয়ে শহিদুল হক লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবের পদ আঁকড়ে থাকায় এই দীর্ঘ ১০ বছরে ওই মন্ত্রণালয়ের যাদের সচিব পদে বাসার সুযোগ ছিল তারা প্রায় প্রত্যেকেই অবসরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেক দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তা ছিলেন। এবার একই পন্থা অবলম্বন করেছেন শহিদুল হক। তিনি কয়েক দিন ধরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন তার চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধি করার জন্য।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে পাশ কাটিয়ে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য শহিদুল হক নিজেই কয়েক দিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ লাভের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তিনি সে সুযোগ পাননি। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকাবস্থায় লেজিসলেটিভ সচিবের এমন তৎপরতা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য বারবার মরিয়া হয়ে ওঠা শহিদুল হকের কারণে গত ১০ বছরে লেজিসলেটিভ বিভাগের অনেক কর্মকর্তা সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যা খুবই দুঃখজনক। কারণ প্রত্যেক কর্মকর্তাই চান চাকরিজীবনে শেষ ধাপটি স্পর্শ করতে। কিন্তু শহিদুল হকের চাতুর্যের কাছে তারা প্রত্যেকেই বলি হয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের অক্টোবরে শহিদুল হককে যখন তৃতীয় দফায় দুই বছরের জন্য চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন বাংলাদেশ লেজিসলেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন তার এই চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যদিও ওই সময় শহিদুল হকের চুক্তি আর বাতিল হয়নি। তবে অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যদি কোনোভাবে শহিদুল হক এই দফায় আবারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান, তাহলে সরাসরি আদালতের শরণাপন্ন হবেন তারা। তারা বলছেন, শহিদুল হক পুরো মন্ত্রণালয়কে জিম্মি করে রেখেছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে মন্ত্রণালয়ের কাজে স্থবিরতা চলে আসবে।

সর্বশেষ খবর