বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আতঙ্ক কাটেনি, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে পুলিশ

ভোলায় সংঘর্ষ

প্রতিদিন ডেস্ক

ভোলায় হিন্দু তরুণের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে ‘অবমাননাকর’ বক্তব্য ছড়ানোর পর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে পুলিশের করা মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন হাজার হাজার মানুষ। গ্রেফতার এড়াতে ইতিমধ্যে বোরহানউদ্দিনের উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে গেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে গতকাল বিকাল পর্যন্ত ওই মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানা গেছে। অবশ্য জেলা শহরের হাটখোলা মসজিদ এলাকা থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের নেতা মাওলানা মিজানুর রহমান। নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল বোরহানউদ্দিন থেকে জানান, ফেসবুক পোস্টদাতা সন্দেহে গ্রেফতারকৃত বিপ্লব চন্দ্র শুভ হিন্দু সম্প্রদায়ের হওয়ায় বাড়িঘরে হামলার আশঙ্কায় রয়েছেন সেখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বোরহানউদ্দিন থানার সামনে দ্বিপকন্যা আবাসিক হোটেলের মালিক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ‘৫ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ স্থানীয় জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। এত মানুষ তো পুলিশের ওপর হামলা করেনি। এরপরও গ্রেফতার কিংবা হয়রানির ভয়ে স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করেছেন।’ বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিরত সাগর চন্দ্র দে জানান, বিপুল হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও তার দায়ভার পুরো সম্প্রদায়ের ওপর বর্তায় না। কিন্তু তারপরও স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আতঙ্কিত। তিনি নিজে গত তিন রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ম. এনামুল হক জানান, পুলিশের করা মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করছেন। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যাবে শুধু তাদেরকেই আইনের আওতায় আনা হবে। নিরীহ কাউকেই এই মামলায় গ্রেফতার কিংবা হয়রানি করা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। স্থানীয় এমপি আলী আজম মুকুল জানান, স্থানীয় আলেম সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে কুচক্রীরা হামলা চালাতে পারেন। নিরপরাধ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবে না বলে নিশ্চয়তা দেন তিনি।

ছয় দফা দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলন : ভোলা প্রতিনিধি জানান, সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের ডাকা গতকাল বিকালের ভোলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি। পরিষদের নেতাদের অভিযোগ সরকারি দলের নেতা-কর্মী এবং পুলিশি বাধার মুখে এবং সংঘাত এড়াতে তারা কর্মসূচি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন। পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ছয় দফা দাবি আদায় না হলে হরতাল, অবরোধসহ বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন জেলা শহর, লালমোহন, দৌলতখান উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। তা ছাড়া পুলিশ তাদের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন স্থানে বাধা দিয়েছে। জেলা শহরের হাটখোলা মসজিদ এলাকা থেকে তাদের দুই কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ছয় দফা হচ্ছে অবিলম্বে ভোলার পুলিশ সুপার ও বোরহানউদ্দিনের ওসির অপসারণ, নিহতদের চার পরিবারকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদেরকে সরকারি খরচে চিকিৎসা, আল্লাহ, নবীরসুল ও ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন, বিপ্লব চন্দ্রের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি এবং এ ঘটনায় আটকদের নিঃশর্ত মুক্তি ও হয়রানিমূলক মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।

দায়ী পুলিশদের বিচার চায় হেফাজত : নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ভোলায় হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকার বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর শাখা। গতকাল দুপুর থেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে জড়ো হতে শুরু করেন হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীরা। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা ভোলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

বিপ্লব চন্দ্রের ভগ্নিপতি ও ভাইকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ : চরফ্যাশন প্রতিনিধি জানান, চরফ্যাশনে রোদ্রেরহাট বাজার থেকে আলোচিত বিপ্লব চন্দ্র শুভর ভগ্নিপতি বিধান মজুমদার (৩১)-কে র‌্যাব ও ডিবির পরিচয় দিয়ে তার মা জুয়েলার্স থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বিধানের বাবা বিনয় ভূষণ মজুমদার গতকাল সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যার নং-৭৪৯। বিধানের বাড়ি গজারিয়ার পশ্চিম চর উমেদ ইউনিয়নে। এটিকে গুজব বলে মন্তব্য করেছেন চরফ্যাশন থানার ওসি সামছুল আরেফিন।

চট্টগ্রামে তিন শিবির নেতাসহ আটক ১৮ : বিডিনিউজ সূত্রে জানাযায়, ভোলায় সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা নিয়ে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্র শিবিরের তিন নেতাসহ ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকলিয়া থানার শান্তিনগর আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে বাকলিয়া থানার ওসি নেজাম উদ্দিন জানিয়েছেন। আটকদের মধ্যে কোতোয়ালি থানার ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মো. আশরাফুল (২৪), মহাসীন কলেজের ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মিজবাহ উদ্দীন হাবিব (২৪), দারুল উলুম মাদ্রাসা চন্দনপুরার ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি রাকিবুল হাসান (২১), দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি মো. সাইমন (২৩) রয়েছেন। জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ শুরু : কমিটির প্রধান স্থানীয় সরকার বিভাগ ভোলার উপপরিচালক মামুদুর রহমান বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। আজ প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও সম্ভব না হওয়ায় তারা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে নেবেন বলে তিনি জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর