রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সৌদিতে ব্যাপক ধরপাকড়

বৈধ কাগজ থাকার পরও গ্রেফতার, দুই দিনে ফিরলেন ৩৬০, কারও খালি পা, কেউ কাজের পোশাকেই বিমানে

জুলকার নাইন

সংসারে সচ্ছলতা আনতে মাত্র পাঁচ মাস আগে বহু স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের আকমত আলী। আকামার মেয়াদ আরও ১০ মাস থাকলেও তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে আকমত আলীর সঙ্গে দেশে ফিরতে হয়েছে গোপালগঞ্জের সম্রাট শেখকেও। অথচ সম্রাটের সৌদি আরবে কাজ করার বৈধ অনুমোদন ছিল আরও আট মাস। সম্রাট জানায়, নামাজ পড়তে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তারপর কোনো কিছুই না দেখে দেশে পাঠিয়ে দেয়। ফেরত আসা অপর একজন সাইফুল ইসলামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তার অভিযোগ, আকামার মেয়াদ দেখানোর পরেও তাকে দেশে পাঠানো হয়। সাইফুল বলেন, মাত্র নয় মাস আগে সৌদি গিয়েছিলেন। আকামার মেয়াদও ছিল ছয় মাস। চট্টগ্রাম জেলার আবদুল্লাহ বলেন, আকামা তৈরির জন্য আট হাজার রিয়াল জমা দিয়েছেন কফিলকে। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতারের পর কফিল আর কোনো দায়িত্ব নিতে চায়নি।

জানা যায়, কাজের বৈধ অনুমোদন (আকামা) থাকা সত্ত্বেও শুক্রবার রাতে ২০০ বাংলাদেশিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে ফিরতে হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সৌদি এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে দেশে ফিরতে হয়েছে তাদের। গতকাল শনিবার রাতেও ১৬০ দেশে ফিরেছেন। চলতি বছর ১৬ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরব থেকে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী ফিরল এবার। খালি হাতে ফেরা এসব কর্মীর কার ছিল খালি পা, কেউ আবার কাজের পোশাক পরেই বিমানে উঠেছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, সৌদি প্রশাসন প্রতিদিন শত শত বিদেশি কর্মীকে গ্রেফতার করছে। রিয়াদ ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে এখন হাজারখানেক বাংলাদেশি রয়েছেন। গত মাসেও বিভিন্ন দিনে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। গত মাসে সর্বাধিক ১৭৫ জন ফিরে এসেছেন একইদিনে। সৌদি প্রেস এজেন্সির সংবাদ অনুযায়ী, দেশটির কর্তৃপক্ষ তাদের চলমান অভিযানে কাজ ও থাকার নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে প্রায় ৩৮ লাখ বিদেশিকে গ্রেফতার করেছে। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এ অভিযান চলছে। জুনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার ৫২১ জনকে। গ্রেফতার হওয়া বিদেশিদের মধ্যে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নয় লাখ ৪০ হাজার ১০০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়। ফিরে আসা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৌদি আরবে বেশ কিছুদিন ধ?রে ধরপাকড়ের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। অনেক ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ আকামা নবায়ন করেনি বা তা বাতিল করে শ্রমিকদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এবারের অভিযানে বাদ যাচ্ছে না বৈধ আকামাধারীরাও। ফেরত অনেক কর্মীর অভিযোগ তারা কর্মস্থল থেকে বাসস্থানে ফেরার পথে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। সে সময় নিয়োগকর্তাকে ফোন করা হলেও তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন না। বরং আকামা থাকা সত্ত্বেও কর্মীদের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার দীর্ঘদিন অবৈধভাবে থাকার কারণেও অনেককে আটক করে ফেরত পাঠানো হচ্ছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করবে বলে জানান তাঁরা।

জানতে চাইলে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ফেরত আসা কর্মীরা যেসব বর্ণনা দিচ্ছেন সেগুলা মর্মান্তিক। সাধারণ ফ্রি ভিসার নামে এক নিয়োগকর্তার বদলে আরেক জায়গায় কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে অনেক লোক ফেরত আসত। কিন্তু এবার অনেকেই বলছেন, তাদের আকামা থাকার পরেও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অনেককে ফিরতে হচ্ছে, যারা খরচের টাকার কিছুই তুলতে পারেননি। তিনি জানান, বরাবরের মতো এবারও দেশে ফেরা কর্মীদের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় বিমানবন্দরে জরুরি খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সহায়তা প্রদান করছে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি। চলতি মাসেই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় ৮০৪ জনকে ব্র্যাক সহযোগিতা করেছে। তিনি আরও বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকেই এই দায় নিতে হবে। পাশাপাশি নতুন করে কেউ যেন গিয়ে এমন বিপদে না পড়েন তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর