মার্কিন ফেডারেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএ) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ (ক্যাব)। এবার অপেক্ষা শুধু চূড়ান্ত পরীক্ষার। আর সেটিতে উত্তীর্ণ হলেই আগামী বছরের শুরুতে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে বাংলাদেশ বিমান। এ ব্যাপারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সব ফি জমা দিয়েছি। এফএ’র প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ক্যাব উত্তীর্ণ হয়েছে। এখন তারা পরিদর্শন করে ইতিবাচক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেই আর কোনো বাধা থাকবে না। আশা করছি, আগামী বছরের শুরুতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক ফ্লাইট নিয়ে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনেক দিনের দাবি নিউইয়র্ক-ঢাকা সরাসরি বিমান চালু করার। আমরা কিছুদিন আগে ১০টি উড়োজাহাজ কিনেছি। আমেরিকার সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা কথা বলে অনেকদূর এগিয়েছি। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি সরকার আপনাদের এই স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় ডিসি-১০ উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-যুক্তরাষ্ট্র রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত বাংলাদেশ বিমান। কিন্তু পুরনো মডেলের উড়োজাহাজের কারণে আপত্তি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ক্রমাগত লোকসান। দুইয়ে মিলে ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ বিমানের এই গুরুত্বপূর্ণ রুটটি। পরে আবার ফ্লাইট চালুর চেষ্টা করে জাতীয় পতাকাবাহী এই প্রতিষ্ঠান। এরপর ২০১৪ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই বিমানের পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনকে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করলে রুদ্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক যাত্রার পথ। ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নানা দুর্বলতার কারণ দেখিয়ে ক্যাটাগরি ওয়ানে উন্নীত হতে দেওয়া হয় কয়েকটি শর্ত। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে একের পর এক আধুনিক উড়োজাহাজ ক্রয় করায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটতে থাকে সরকারের। বেবিচকের দাবি, শর্ত পূরণে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। এরই মধ্যে সিভিল এভিয়েশনের মান উন্নয়ন, বহরে আধুনিক উড়োজাহাজ সংযোজনসহ সব যোগ্যতাই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর জন্য এখন অপেক্ষা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেশন এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত ধাপের পরীক্ষা। তবে সরকার পক্ষের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এভিয়েশন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, সাবেক কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে এই রুটের ফ্লাইট চালু করতে সরকারকে আরও কাঠখড় পোড়াতে হতে পারে। এ ব্যাপারে এভিয়েশন বিশ্লেষক উইং কমান্ডার (অব.) হাসান মাসুদ বলেন, কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রি করেছে এরকম একটি আলোচনা শোনা গিয়েছিল। সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে রুট চালু করতে সরকারকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এই রুটে প্রচুর যাত্রী চাহিদা রয়েছে। ফ্লাইট চালু হলে লাভবান হবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু দুর্নীতি ঠেকাতে না পারলে সব উদ্যোগই লোকসানে পরিণত হবে।