শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তিন বছরে সম্মেলন মাত্র তিন জেলায়

বিস্ময়কর সাংগঠনিক স্থবিরতা আওয়ামী লীগে, সভা-সমাবেশ তেমন হয়নি, নেতারা ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে, অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে মাঠের নেতা-কর্মীরা চেনেন না

শাবান মাহমুদ ও রফিকুল ইসলাম রনি

তিন বছরে সম্মেলন মাত্র তিন জেলায়

গত তিন বছরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক স্থবিরতা ছিল বিস্ময়কর। এই সময়ে মাত্র দুটি জেলার সম্মেলন হয়। মাসখানেক আগে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর আর একটি জেলার সম্মেলন করা হয়। এই মেয়াদে সভা-সমাবেশ যে খুব একটা হয়েছে তা-ও বলা যাবে না। নেতারা ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে মাঠের নেতা-কর্মীরা খুব একটা চেনেনও না। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। সে অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদি কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক মাস হলো। পরবর্তী সম্মেলনের তারিখ আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। এই তিন বছরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংগঠনকে গতিশীল করতে পারেননি। দলকে গতিশীল করতে যে পরিমাণ সাংগঠনিক সফর, সভা-সমাবেশ করার দরকার ছিল তা হয়নি। সূত্রমতে, ২০১৬ সালের ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের পর তৃণমূল সংগঠনকে গতিশীল করতে এবারই প্রথমবারের মতো বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে যুগ্মসাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া গঠন করা হয় বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম। এ টিমে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সমন্বয়ক করা হয়। লক্ষ্য ছিল তৃণমূলকে সম্মেলনের মাধ্যমে চাঙা করা ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলা-উপজেলায় সফর করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি বলে আলোচনা রয়েছে দলের ভিতরে-বাইরে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা তো জেলায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে চলে আসো।’ দলীয় প্রধানের কড়া বার্তার পর শেষ মুহূর্তে সম্মেলনে মনোযোগী হয়েছেন নেতারা। এখন পর্যন্ত ২০টি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলায় সম্মেলনের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

গত তিন বছরে মাত্র তিনটি জেলার সম্মেলন হলেও সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায় স্বীকার করতে নারাজ দলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার প্রায় সব কটির সম্মেলন শেষ হয়েছিল ২০১৬ সালে। এরপর গত তিন বছরে এ জেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আমরা দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর করেছি। উপজেলা ও ইউনিয়ন ভোট, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি। এখন অনেক জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছি। কাজেই সাংগঠনিক স্থবিরতা ছিল এটা বলা যাবে না।’

দলের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, বিগত সম্মেলনের পর দায়িত্বে আসা নেতাদের আমলনামা বিশ্লেষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও দলের গোপন টিমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি। খতিয়ে দেখছেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক অর্জন। নিজস্ব বলয় ভারী করতে কোন নেতার হাত ধরে দলে অনুপ্রবেশ, কার এলাকায় সংগঠন কতটা গোছানো বা অগোছালো সেসব হিসাব করছেন দলীয় প্রধান। চিহ্নিত করছেন কোন নেতা দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো নেতা দলের পরিবর্তে নিজের ও আত্মীয়স্বজনের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত ছিলেন। এসব নেতার এলাকার দলীয় কর্মীরা উপেক্ষিত হয়েছেন পদে পদে। সংগঠনের কথা চিন্তা না করে কারা কারা আত্মকেন্দ্রিক ছিলেন সেসব ফিরিস্তি টু দ্য পয়েন্টে হিসাব করছেন শেখ হাসিনা। আসন্ন সম্মেলনে দলের পদে থাকা এবং পদায়নে সেগুলো নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলে দলের নীতিনির্ধারণ ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা, একই বছরের ১৯ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার সম্মেলন হয়। গত শনিবার সর্বশেষ সম্মেলন হয় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের। সম্মেলনের তোড়জোড়ের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে আরও ২০টি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১৭টি জেলা। এ বিভাগের সব জেলা-ই মেয়াদোত্তীর্ণ। এখন পর্যন্ত কোনো জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। ঢাকা মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনের প্রস্তুতির কথা বলা হলেও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে হচ্ছে না। ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচ জেলার একটিতেও সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। সিলেট বিভাগের পাঁচ জেলার মধ্যে আগামী ৩০ নভেম্বর সিলেট মহানগর ও ৫ ডিসেম্বর জেলার সম্মেলন হবে। বাকিগুলোর এখনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, রাজশাহী বিভাগের নয় জেলার মধ্যে আগামী ৭ ডিসেম্বর বগুড়া, ২৭ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সম্মেলনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকিগুলোর এখনো কোনো খোঁজ নেই। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রংপুর বিভাগের নয় জেলার মধ্যে ৭ নভেম্বর পঞ্চগড়, ২৬ নভেম্বর রংপুর জেলা, ২৮ নভেম্বর রংপুর মহানগর, ৮ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম, ১৯ ডিসেম্বর লালমনিরহাট জেলায় সম্মেলন হবে। বাকিগুলোর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’ চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার সম্মেলন হয়েছে গত শনিবার। এ বিভাগের ১৫টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পাঁচটির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ২৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ি, ২৫ নভেম্বর রাঙামাটি, ২৬ নভেম্বর বান্দরবান, ২১ নভেম্বর নোয়াখালী, ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সম্মেলন হবে।’ বরিশাল বিভাগে রয়েছে সাত জেলা। এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত তিন বছরে আমরা বসে থাকিনি। মেয়াদ শেষ না হওয়ায় সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারসহ জাতীয় নির্বাচন ছিল। সে কারণে সম্মেলন করা যায়নি। এখন আমরা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছি। আগামী ১ ডিসেম্বর বরগুনা, ২ ডিসেম্বর পটুয়াখালী, ৩ ডিসেম্বর পিরোজপুর, ৭ ডিসেম্বর বরিশাল মহানগর ও ৮ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার সম্মেলন হবে। এ ছাড়া ৯ নভেম্বর ভোলা ও ১৩ নভেম্বর পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা হবে।’ খুলনা বিভাগে এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর